নীল গাছ বড় হওয়ার পর সে গাছ থেকে কি পরিমাণ নীল পাওয়া যাবে তা অনুমান করা এক কষ্ট সাপেক্ষ ব্যাপার, কেননা নীল গাছে তো নীল দেখা যায় না। বস্তুত নীল গাছে নীল থাকে না। আর যা থাকে তার রং নীল নয়। আসলে নীল গাছে থাকে “ইন্ডিকানা”। এটা এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যার কোনো রং নেই- বলা যেতে পারে নীলের পূর্বাবস্থা। অভিজ্ঞ চাষীরা গাছ দেখলেই বুঝে ফেলে যে গাছ স্বাস্থ্যবতী ও পরিপক্ক কিনা বা গাছ কাটার সময় হয়েছে কিনা। কিন্তু গাছ থেকে নীল কতটুকু পাওয়া যাবে বা সে নীলের উৎকৃষ্টতা কতটুকু তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
উৎপাদনের জটিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত সে রহস্যের কিনারা হবার নয়। এই গাছ থেকে নীল উৎপাদনের জটিল প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল জুড়ে যে অসংখ্য নীলকুঠি আছে সেখানে।
নীল প্রস্তুত একেবারে একটি গ্রামীণ শিল্প। কেননা নীল গাছ কাটার অল্পক্ষণের মধ্যেই তা প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরু করতে হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে নৌকা নির্ভর ও নদীমাতৃক বাংলাদেশে নীলকুঠি করা হত নদীর কোল ঘেষে, নীলক্ষেতের কাছে। কাটা নীল গাছগুলো নীলকুঠিতে নেয়া হত মহিষের অথবা গরুর গাড়িতে তাতে সময় লাগত আরও বেশি। তাই নজর রাখা হত নীলকুঠি যাতে হয় নদী তীরে।
নীলকুঠিতে এই গাছগুলো পানিতে ফেলে রেখে গেঁজানো হত। এই প্রক্রিয়ায় ইন্ডিকান ভেঙে গিয়ে পানিতে ভেসে উঠত এক ধরনের পদার্থ যার মধ্যে আছে হলুদ বর্ণের ইনডস্কিল ও ফ্রুকটোজ। চৌবাচ্চার পানি ফেলে দিয়ে গাছগুলোকে পেটানো হত। খানিকক্ষণ হাওয়া লাগালে ইনডক্সিল নীলে পরিণত হত। নীলের কণাগুলো ভেসে থাকত পানিতে। এগুলোকে নীল কাদার মত জমতে দেয়া হত।
Leave a Reply