মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মুরাদকে চ’টে উঠতে দেখে খোকা হেসে ফেললো।
বললে, ‘অমন দাঁতমুখ সিটকে হাত-পা ছুড়িস না, তোকে উল্লুকের মতো দেখায়! আমার তো বারোটা বেজেই গেছে, এ আর নতুন কথা কি’ মুরাদ বললে, ‘বাজে কথা রাখ, রেসকোর্সে যাচ্ছিস তো কাল?’
‘কালকের কথা কাল হবে, তুই কি এখন উঠছিস?’
‘যেতে হবে না?’ চোখ নাচিয়ে মুরাদ বললে, ‘তোর কি, তুই শালা দিনের পর দিন ঢালাও বিছানায় বুদ্ধের শয়ান হ’য়ে থাকবি, আর পায়দল মেরে মেরে অন্যেরা তোর চেহারা মুবারক দেখে যাবে, আছিস বেশ। যাচ্ছিস তো? প্রত্যেকটা দিন এখন ইতিহাসের এক একটি পাতা; আমরা এক একজন এক একটা সাক্ষী হ’য়ে থাকবো। চ’লে আয় রেক্সে, এক সঙ্গে দল বেঁধে বের হওয়া যাবে।’
‘চেষ্টা ক’রে দেখবো।’
‘দিন দিন তুই শালার একটা কুনোব্যাঙ ঠুটো জগন্নাথ হ’য়ে যাচ্ছিস!’ যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালো মুরাদ, তারপর কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললে, ‘দোহাই তোর, কালকে আয়-‘ খোকাকে খুব অসহায় মনে হয় এই সময়। ভিতরে ভিতরে একটা কিছু ছুরির মতো কাটছে তাকে, সুস্থির হ’তে পারছে না কিছুতেই; হাতের মুঠোয় এমন একটা কিছু চায় খুব ধারেকাছে যা নেই, কিংবা কোনোদিন আর তা পাওয়া যাবে না।
জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো সে। রাস্তায় মিছিল; শ্লোগান ফেটে পড়ছে, রক্ত চাই রক্ত চাই! দুপুরের ঝিলমিলে রোদ, বাতাস এবং যাবতীয় নিঃশব্দ চারুময়তা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। জ্বরাক্রান্ত সময়ের গা থেকে ভাপ উঠছে, ঝাঁঝালো তাতানো দস্যুর মতো আকাশ রোষ কষায়িত নেত্রে অপলক চেয়ে আছে, যে কোনো মুহূর্তে ছুড়ে মারবে ঝনঝনে থালা, খোকা তার নিজের ভিতরে একটা অদ্ভুত ধরনের ভাঙন অনুভব করে।
‘আসাদের কথা তোর মনে আছে মুরাদ ?’
দূরাগত ধ্বনির মতো মুরাদের কানে বাজলো কথাটা। বেরুতে গিয়ে সে আবার ঘুরে দাঁড়ালো। বললে, ‘মনে থাকবে না কেন, সেই যে- ‘আপদ বালাই উল্টো হাঁটে দুরমুশ খাঁ ঠোকে জুতো, আসাদ শুধু ম্যাজিক দেখায়-
ফুশ-মন্তর দেখল্লি তো?’
Leave a Reply