শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৩৯)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

খোকা নীরবে শুনছিলো। তার ঘাড়গোঁজা মূর্তি দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো মুরাদ খাঁচায় পুরে খোঁচা দিলেও টু শব্দটি করবে না সে এখন। খোকার এই ধরনের নাটুকেপনাময় মতিগতির সঙ্গে তার অল্পবিস্তর পরিচয় আছে।

‘পদপিষ্ট হবার ভয়ে’ কথাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো খোকা। নিছক খুশি করার জন্যে বলা, নাকি অগোচরে ঠোঁট গ’লে টুপ ক’রে ঝারে পড়েছে! হয়তো ঘোলাটে পরিস্থিতির পাগলা ঘোড়ার ঘাড় অন্যদিকে ফেরাবার লাগাম হিসেবেই অঙ্ক কষে ব্যবহার করলো মুরাদ কথাটা। কিন্তু এত প্যাঁচের ভিতর যাবার কথা নয় মুরাদের; সৎসাহস আছে ওর, খোকা জানে। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

‘তাহলে দেখা যাচ্ছে লতা-গুল্ম, ফল-ফুল, জল-বায়ু, জন্তু- জানোয়ার-মানুষ, সবকিছুর এক আবশ্যিক সমীকরণ হ’লো দেশ, যা প্রতিনিয়তই পর্যায়ক্রমে এক একটি চূড়ান্ত বাস্তব অবস্থার ভিতর দিয়ে অনিবার্যভাবেই ছুটে চলেছে মহাকাল তথা ধ্রুবের দিকে’ খোকার দিকে তাকালো মুরাদ। তার চোখমুখের ঘুটঘুটে সেই মেঘটা সম্পূর্ণ বিদূরিত এখন; রুগ্ন অপ্রকৃতিস্থতা কেটে গিয়ে আলো ঝলমল করছে।

একটু আগেই কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে ঘরের ভিতরে নাটকের যে তুলকালাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিলো দু’জনের কারো মুখ দেখেই এখন তা অনুমান করা শক্ত।

‘ভুল বলেছি কিছু?’

‘কি জানি!’ গা ছেড়ে দিয়ে জবাব দিলো খোকা।

‘বুঝতে পারছিস তো, দেশ কতোগুলো অবস্থারও নাম-‘ ‘বুঝতে পারছি’ খোকা হেসে বললে, ‘তুই কবিতা লিখিস খিস্তির ভাষায়, আর কথা বলিস কেতাবী ভাষায়, ব্যাপারটা কিন্তু অদ্ভুত।’

মুরাদ সংযম বজায় রেখেই বললে, ‘তোর সমস্যাটা কি আমি তা জানি। তোর সমস্যা হ’লো দেশ আগে না মানুষ আগে; দেশ বড় না মানুষ বড়। আসলে মানুষ নিয়েই যে দেশ এই সহজ সরল সমাধানটা তোর মগজে ঢোকে না, কেননা তোর ধড়ের উপর যে কাঁধ, কাঁধের উপর যে মাথা, তা একটা নয় গোছা গোছা। একটার জায়গায় দশটা মাথা হ’লে সে আর মানুষ থাকে না, সে হয় গাছ। গাছের সঙ্গে গুঁতোগুতি ক’রে কোনো লাভ নেই।’

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024