শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-২৫)

  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


আফ্রিকায় নীল চাষের ফরাসী স্বপ্ন

বিশ্বের নীলের বাজারে আধিপত্য ছিল বৃটেনের। ১৮২০ সালের দিকে ফ্রান্স বৃটেনের এই আধিপত্য ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লাগল। এই সময় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক নীতিতে এক পরিবর্তন ঘটে। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অর্থনৈতিক শোষণের দিকে তারা নজর দেয় বেশি। পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসী উপনিবেশ সেনেগালে এই নতুন নীতি কার্যকরী করার চেষ্টা চলছিল জোরেসোরে। জ্যাকুয়েস-ফ্রাসোঁয়া রজার তখন ছিলেন সেনেগালের প্রথম বেসামরিক গভর্ণর। তিনি ছিলেন যেমন উচ্চভিলাসী তেমনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রশাসক। কৃষি উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল তার স্বপ্ন। প্যারিসে অবস্থিত নৌ-বাহিনী ও উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রজার সেনেগালে নীলচাষ উন্নয়নের চেষ্টা শুরু করলেন। কেউ নীলকর হতে চাইলে সরকার তাকে সব রকম সাহায্য দিয়ে উৎসাহিত করত।”

রজার ১৮২২ সালে একটি সরকারি বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। নীল গাছের ফলনের পরীক্ষা করতেন তিনি এই বাগানে। অন্যান্য ফরাসী উপনিবেশের গভর্ণর ও কনসালদের সঙ্গে চিঠির মারফত যোগাযোগ রাখতেন, যেমন জর্জিয়া ও ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি প্রয়োজনীয় ও ফলপ্রসূ গাছ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি গবেষণা-প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন যেমন, কেপ ভার্দে ও ফরাসী গায়ানায়। সরকারি বাগানগুলোতে নীলের চাষ হয়েছিল ভাল। এবার তিনি একটি গবেষণাগার তৈরি করলেন নীল গাছের রাসায়নিক পরীক্ষা করার জন্যে। ১৮২৩ সাল থেকে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে লাগল। তখন থেকে রজারের ধ্যান-ধারণা হল নীলগাছের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

তখন সরকার তাকে অনুরোধ করল বাংলাদেশের নীল গাছ সেনেগালে কেমন ফলন দেয় তা দেখতে। অনেক পরীক্ষার পর দেখা গেল বাংলাদেশের নীল গাছ সেনেগালে বিশেষ ফলপ্রসূ নয়। তখন স্থানীয় জাতের গাছের সাহায্যে রজার তার পরীক্ষা চালাতে লাগলেন। তিনি তখন সরকারি বাগান রক্ষক মিঃ থিবেরিকে পাঠালেন কেওর অঞ্চলে। সঙ্গে দিলেন উটসহ দুই নিগ্রোকে আর কিছু জিনিসপত্র। উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু নীল গাছের পাতা সংগ্রহ করা। সেনেগালের অন্যান্য অঞ্চলেও লোক পাঠানো হল একই কাজের জন্যে। সেনেগালে নীল প্রস্তুত করা হত গাছের শুকনা পাতা থেকে, বাংলা ও জাভার মত গাছের সবুজ পাতা থেকে নয়। ৬৪ ১৮২৫ সালে সেনেগালের সব নীলকর ও তাদের এজেন্টদের একটি সার্কুলার পাঠানোর মারফত পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় ফল প্রকাশ করা হল। ওই সার্কুলারে বলা হল কি করে সেনেগালের পরিপ্রেক্ষিতে উৎকৃষ্ট নীল চাষ করা যায়।

আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেনেগালের রাজধানী সেন্টলুই-এর কাছে একটি উন্নত ধরনের নীলকুঠি বানানো হল। পরীক্ষা চলল কি করে সেনেগালে উন্নত মানের নীল প্রস্তুত করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024