শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৩০)

  • Update Time : বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


ক্যাপ্টেন দারাক নামে মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং নিজে তিনি চাষ করতেন নীলের। তাঁর ছেলে আলেকজান্ডার, মেয়ে পালসির ও তার জামাই পিয়ের (চেরি) ভার্লি- এরা সবাই নীলকর ছিলেন। তাদের নীলকুঠিগুলো ছিল মধ্য বাংলায়। এ ছাড়া তিনি এমন দলের নীলকর যাদের কিছু লোকের হাইতিতে নীলচাষের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। হাইতির পর বসতি করেন বৃটিশ বাংলায়। প্রকৃতির খেয়ালখুশী ও শস্যের উপর এর প্রভাবে সব সময় এক রকম হতনা ফলন। কিন্তু তবুও মোটামুটিভাবে তাদের দিন কাটছিল ভালই। দারাক তার রিপোর্টের শেষ দিকে বলেছেন যে বঙ্গদেশে ফরাসী নীলকরের অভাব কখনো ছিল না, যদিও আজকাল তারা সবাই কর্মচারী। বঙ্গদেশের নীল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে সেনেগালে নীল চাষের শিল্পোদ্যক্তা হিসাবে নিয়োগদান করা যেতে পারে।

তবে তার হাতেনাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা যেমন লাগবে তেমনি লাগবে তাত্ত্বিক অর্ন্তদৃষ্টি। আর এর সঙ্গে কৃষিকাজ ও রসায়ন সম্পর্কে সামান্য কিছু জ্ঞান। তবে কি নাঃ “বঙ্গদেশে এ রকম কাউকে পাওয়া খুবই মুশকিল। এর উপর আবার মালিকদের কাছ থেকে এরা পায় অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা। বড় রকমের লোভ দেখানো ছাড়া এরা যেতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। প্রধান কর্মচারীর মাসিক বেতন ৪০০ থেকে ৫০০ শত টাকা (১০০০ থেকে ১২৫০ ফ্রাঃ)। এর উপর আবার লাভের উপর শতকরা সাড়ে পাঁচভাগ হারে মুনাফার অংশ। নীলের ভাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বেতনের চাইতে কমিশন বেশি। এ পরিমাণ লাভ যেখানে ভোগ করে উচ্চপদস্থ কোনো কর্মচারী সেখান থেকে সহজে অন্য কোনোখানে যে যেতে চাইবে না এ তো স্বাভাবিক। যে দেশে বসবাস করে সে দেশকে তারা নিজেদের আবাসভূমির মতই মনে করে। সে দেশের রীতিনীতি গ্রহণ করে তারা বাসিন্দাদের মতই থাকে। অন্যখানে থাকতে হলে তারা মনে করে যেন বিদেশে থাকতে হবে। সে দেশের আবহাওয়া তাদের সহ্য হবে কিনা তারই বা ঠিক কি।

বাংলার ফরাসী কর্তৃপক্ষ সেনেগালে পাঠাবার জন্য যখন লোক খুঁজছিলেন তাদের এই সব বিবেচনা করতে হচ্ছিল। লোক খোঁজার এই চেষ্টা যখন ব্যর্থ হল তখন তিনি অধঃস্তন কর্মচারীদের মধ্যে উপযুক্ত কাউকে খুঁজছিলেন। তাও কিছু হল না। তারপর তো আমি বাংলা ছাড়লাম। ১৮৬ নীল উৎপাদনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল সম্পর্কে যাদের ভাল ধারণা ও অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকদের জন্য তখন বিশ্ববাজার উন্মুক্ত। আর বঙ্গদেশে কাজের সুযোগসুবিধা সবচেয়ে বেশি। সে সময়ে বঙ্গদেশে নীল উৎপাদনের উৎকর্ষতা এমন এক শীর্ষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে তা তখন শিল্পকলার সমতুল্য। বিশ্বের নীলের বাজারে আধিপত্য তখন বঙ্গদেশের। আর বিশ্বের অন্য কোনো গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় যে নীল শিল্প গড়ে তুলতে চায় তার আদর্শ হচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে নীল শিল্পের মালিক বা তার পরিচালকরা আখ্যাত গ্রামে দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে থাকলেও এবং বর্হিবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকলেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গী সংকীর্ণ ছিল না। তারা নানা জায়গায় যেতেন, বিভিন্ন কলাকৌশল গ্রহণ করতেন, তাদের পণ্যদ্রব্যের উন্নয়নসাধনের জন্য অনেক রকম পরিক্ষা-নিরীক্ষা করতেন ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের জন্য ছিলেন উন্মুক্ত দ্বার। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন দারাক নিজেই। তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন, কি করে তিনি তার ছেলের আবাদে ভাল নীল গাছ ফলনের জন্য নানা রকম পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেছেন। যে বছর তাকে রিপোর্ট প্রণয়নের জন্য সরকারী নিয়োগ দান করা হয় তার আগের বছরই তিনি এসব করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024