শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-১২)

  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মণীশ রায়

অর্ঘ্য  কি ওর মতোই একা ? ওর সাথে কি পাখিরা কথা বলে ? গাছেরা ?

ছেলেটার অঙ্কে নাকি মাথা ভালো। হাতে সারাক্ষণ একটা ট্যাব। একি ভাব নাকি প্রয়োজন ? যাদের অঙ্কে মাথা ভালো হয়, তারা নাকি আজেবাজে  চিন্তা করে না।

এরকম নানা প্রশ্ন তুষ্টির মনে মেঘের আস্তরণের মতো ঘুরে বেড়ায়।

দুদিন তুষ্টিকে সে ভরদুপুরে রিং দিয়েছিল। তখন সে নিজের সম্পর্কে বলতে পারেনি। ওর শুধু জিজ্ঞাসা। তুমি ছাদে গীটার নিয়ে কি কর ? ভোরবেলায় তোমার গান কে শোনে ? ইত্যাদি।

তুষ্টি এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। নিজের সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না।

বিরক্ত হয়ে  সে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছে,‘তুমি রাতের বেলায় ছাদে আসো ?’

‘মাথা খারাপ ? মা-বাবা দেবে ?’

‘ধরো যে রাতে বড় করে আকাশে চাঁদ ওঠে তখন ?’

‘দূর। চাঁদের আবার নিজের আলো আছে নাকি ? মানুষ শুধু শুধু চাঁদকে নিয়ে গান বাধে। যার নিজের বলে কিছু নেই, সে কি করে সুন্দর হয় ?’ অর্ঘ্য পাকামো করে।

একথায় তুষ্টি চুপ হয়ে যায়। শেষে বলে,‘তুমি এভাবে রিং দিয়ো না। এটা মার ফোন।’

অর্ঘ্য সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে,‘ তাহলে কিভাবে কথা বলব ?’

‘কথা বলার কি আছে ?’

কোন কথা নেই অর্ঘ্যর মুখে। একটু পর ফোনটা কেটে দেয়।

আজ বিকালে ছাদে উঠে তুষ্টি প্রথমেই ওকে খুঁজতে শুরু করে। ওরা ভাড়া থাকে পাশের বাড়িতে। বাড়িওলার নানা বিধিনিষেধ থাকে যখন তখন ছাদে ওঠায়। সব বাধা পেরিয়ে অর্ঘ্যর পক্ষে ছাদে ওঠা সম্ভব হয় না। তবু সুযোগ বুঝে ঠিকই ওর সাথে কথা বলতে চলে আসে সে।

‘এ্যাই তুষ্টি ?’

চমকে ফিরে তাকায় পাশের ছাদে। ওর চশমার কাচে সূর্যাস্তের আলো এসে পড়েছে। সরাসরি তাকাতে পারছে না। হয়তো ঘোলাই লাগছে সবকিছু।

‘কি কর তুমি ?’ তুষ্টি জিজ্ঞাসা করে। এর ভেতর সম্পর্কটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । জড়তা অনেক কমে গেছে।

‘আমরা আগামিকাল নিজেদের ফ্ল্যাটে উঠে যাচ্ছি। তোমার সাথে আর দেখা হবে না। ’ আনন্দের ঝংকার কথার পরতে পরতে।

‘কোথায় তোমাদের ফ্ল্যাট ?’ তুষির প্রশ্ন।

‘ধানমন্ডি। খিলগাঁও থেকে অনেকদূর। ’

মনটা নিমেষে খারাপ হয়ে গেল তুষ্টির। মুখে কিছু বলল না। নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অর্ঘ্যরে মুখের দিকে। বাইরে ভাবখানা এমন যে ওর আসা-যাওয়ায় তুষ্টির তেমন কিছু যায়-আসে না। কিন্তু মনের ভেতর নানারকম  চোরা ভাবনা  ওকে বড় বিরক্ত করে চলেছে।

স্কুলে তুষ্টির ঘনিষ্ঠ টিয়া দুটোর সাথে দেখা হয়। ওরাও এ শহর ছেড়ে দেবে। আবার অর্ঘ্যও ওদের মহল্লা ছেড়ে যাচ্ছে। সবাই এভাবে দূরে চলে গেলে তুষ্টির কী হবে ?  যত ভাবছে তত নিঃসঙ্গতা বোধে জরজর হয়ে ওঠে মন। চারপাশের সব কেমন মলিন আর বিষণœ দেখায়।

এসময় তুষ্টি মুখ ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে, চোখের সামনে সৃষ্টি দাঁড়ানো। ফিসফিস করে বলে উঠল,‘এই অপরিচিত ছেলের সাথে অত কথা কিসের দিদি ?’

‘কেন, কথা বলতে কি তোর অনুমতি লাগবে?’

‘লাগবে। লাগবেই তো।’ মুরুব্বীর মতো উত্তর দেয় সৃষ্টি।

‘ওরা পাড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে, জানিস ?’

‘এতকিছু জেনে গেছিস ?’ বলে সে আড়চোখে অর্ঘ্যকে একঝলক দেখে নেয়,‘ নারে, ছেলেটা ভ্যাবলা কিসিমের। জিগা তো হবি কি ওর ?’

‘তুই জিগা ?’

‘আরে বাবা, জিগা না ?’

তুষ্টি এবার অর্ককে জিজ্ঞাসা করে,‘তোমার হবি কি ?’

একথায় হেসে ওঠে অর্ঘ্য। হাতের ট্যাবটি দেখিয়ে বলে ওঠে,‘মোবাইলে গেম খেলা আর হাত দেখে মানুষের ভবিষ্যত বলে দেয়া।  তোমাদের ?’

দুই বোনকে উদ্দেশ্য করে বলা। তুষ্টির কিছু বলার আগেই কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি বলে উঠল,‘আমাদের দুই বোনের হবি হল ছাদে ঘুরে বেড়ানো আর গেম খেলা পোলাপানের বারোটা বাজানো, কোন সমস্যা ?’

একথায় অর্ঘ্য হতচকিত হয়ে পড়ে। সে কি বলবে বুঝতে পারে না। একটু পর উত্তর দেয়,‘ আজব তো ।  আর কিছু ?’

‘হ্যা আছে তো। আমরা নিয়মিত ভাত খাই। স্কুলে যাই। ফুচকা খাই। ভাল দোকানের পেস্ট্রি খাই। এসবই আমাদের হবি। কিছু বলবেন ?’

অর্ঘ্য আরও কুঁচকে যায়। তুষ্টি এবার হেসে ওঠে। সৃষ্টির পাশে দাঁড়িয়ে বলে.‘ও ক্ষ্যাপাচ্ছে তোমাকে। বাপি বলে ধাইন্যা মরিচ ? আচ্ছা, ধাইন্যা মরিচ কি, বলতে পারো?’

অর্ঘ্যর এবার ঘাম বেরনোর জোগাড়। সে এখানে দাঁড়ালে যে আরও নাজেহাল হতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সে ভেবেছিল, শখ হিসাবে হাত দেখার কথা বললে ওরা বুঝি অর্ঘ্যর পিছু ছাড়বে না। কিন্তু ওরা তো সেদিকে গেলই না। ঝন্টু মামার কথা তাহলে ভুল ? কিন্তু মামা যে ওকে বলেছিল, মেয়েদের যদি একবার বলতে পারিস যে তুই পামিস্ট, তাইলেই হল। তোর পিছু ছাড়বে না।

এই বুঝি পিছু না ছাড়া ? মামাটা আসলেই একটা ভÐ, ধাপ্পাবাজ। সে কথা না বাড়িয়ে দ্রæত ছাদ ছেড়ে দেয়; পিছনে দুই বোন খিলখিল করে হেসে ওঠে।

তুষ্টি হাসে বটে ; কিন্তু মনটা ঠিকই খারাপ হয়ে থাকে। বুঝতে পারে না, কেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024