রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১১১)

  • Update Time : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তদীয় অলোকসামান্ত সৌন্দর্য্য দেশময় রাষ্ট্র হইয়া পড়ে। মুর্শিদাবাদে এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত ছিল যে, তৎকালে ফৈজীর ন্যায় সুন্দরী সমগ্র ভারতবর্ষে দৃষ্ট হইত না। তাহার উত্তপ্তকাঞ্চনবর্ণ, কৃশ অঙ্গযষ্টি ও মন্থরগমন অনেককে মোহিত করিয়া ফেলিত; সর্বাপেক্ষা তাহার কৃশাঙ্গের প্রশংসাই অধিক ছিল। ফৈজীর অনুপম রূপরাশির কথা সিরাজের কর্ণগোচর হইলে, সিরাজ লক্ষ মুদ্রা সমর্পণ করিয়া বহু অনুনয়বিনয়ে তাহাকে, মুর্শিদাবাদে আনয়ন করেন। এবং নিজ অন্তঃপুরিকাগণের অন্তর্ভূত করিয়া লন।

ফৈজীর সেই উন্মাদয়িত্রী রূপসুধা পান করিয়া সিরাজ অধীর হইয়া পড়িলেন; কিন্তু তাহার তলদেশে যে ভীষণ হলাহলের স্রোতঃ প্রবাহিত হইতে-ছিল, তাহা তিনি প্রথমে বুঝিতে পারেন নাই। যদিও সিরাজের অনু- পম সৌন্দর্য্য অনেক রমণীর মনঃপ্রাণ হরণ করিতে পারিত, কিন্তু তাহা ফৈজীর হৃদয়কে বিন্দুমাত্র আকর্ষণ করিতে পারে নাই। ফৈজী সিরা- জের ভগিনীপতি সৈয়দ মহম্মদ খাঁর প্রেমে পতিত হয়। সৈয়দ মহম্মদ খ। ইউরোপীয়দিগের ন্যায় সুন্দর ও বলিষ্ঠ- ছিলেন। ফৈজী গুপ্তভাকে তাঁহাকে অন্তঃপুর মধ্যে লইয়া যায়। দুই দিবস পরে এই গুপ্ত প্রণয়ের কথা সিরাজের কর্ণগোচর হইলে, তাঁহার হৃদয় একেবারে ভাঙ্গিয়া যায়।

দুঃখে ও ক্রোধে জ্ঞানহারা হইয়া তিনি ফৈজীর নিকট উপস্থিত হইলেন। সিরাজের মূর্তি দেখিয়া ফৈজী জীবনের আশা ত্যাগ করিতে প্রস্তুত হয়। সিরাজ কাঁপিতে কাঁপিতে বলিলেন, “আমি দেখিতেছি তুমি যথার্থই বারাঙ্গনা।” ফৈজী আপনার জীবনে হুতাশ হইয়া উত্তর করিল,- “জাঁহাপানা আমার ব্যবসায় তাহাই, এই রূপ তিরস্কার আপনার জননীর প্রতি প্রয়োগ করিলে শোভা পাইত।” জননীর প্রতি এইরূপ শ্লেষবাক্য শুনিয়া সিরাজ ক্রোধে উন্মত্ত হইয়া উঠিলেন এবং তাহাকে একটি প্রকোষ্ঠে বন্ধ করিয়া তাহার দ্বার ইষ্টক দ্বারা চিররুদ্ধ করিবার আদেশ দিলেন। হতভাগিনী গৃহাবদ্ধ হইয়া মারমিয়নের কনষ্টান্টের ন্যায় আপ- নার জীবলীলার শেষ করিল।

তিন মাস পরে সে দ্বার উন্মুক্ত হইলে দেখা গেল, তাহার কঙ্কালাবশিষ্ট দেহ পড়িয়া রহিয়াছে এবং তাহার কৃশাঙ্গের জন্য সে কঙ্কাল দেখিয়া কাহারও মনে বীভৎস ভাবের উদয় হয় নাই। ফৈজীর বিশ্বাসঘাতকতায় রমণীজাতির উপর সিরাজের আন্তরিক ঘৃণা উপস্থিত হয়। কিন্তু তিনি যখন লুৎফ উন্নেসার হৃদয় পরীক্ষা করিতে লাগিলেন, তখন দেখিলেন যে, সে হৃদয় অটল! তাহার প্রবাহ কেবল একই দিকে প্রবাহিত হয়। ফৈজীর হৃদর যেরূপ পৈশাচিক, লুৎফ উন্নেসার হৃদয় ততোধিক পবিত্র। তাই লুৎফ উন্নেসার প্রতি তাঁহার অগাধ ভালবাসা দেখিতে পাওয়া যায় এবং তিনিই সিরাজের প্রিয়তমা মহিষী বলিয়া ইতিহাসে উল্লিখিত হইয়া থাকেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024