রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১১২)

  • Update Time : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা বলিয়া রাখি, লুৎফ উন্নেসা অথবা ফৈজী কেহই সিরাজের বিবাহিতা স্ত্রী নহেন। সিরাজের বিবাহিতা স্ত্রীর নাম ওমদাৎ উন্নেসা। তিনি কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কন্যা; তাঁহার পিতার নাম মির্জা ইরাজ খাঁ। প্রথমে আলিবর্দী খাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজী আহ- ম্মদের দৌহিত্রী, আতাউল্লা খাঁর কন্যার সহিত সিরাজের বিবাহ স্থিরীকৃত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কন্যাটি কালকবলে পতিত হওয়ায় আলিবদ্দী মির্জা ইরাজ খাঁর কণ্ঠার সহিত সিরাজের বিবাহ দেন। এই বিবাহ মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়। মুতাক্ষরীনে ইহা বিশেষরূপে বর্ণিত হইয়াছে। আমরা যেরূপ দেখিতে পাই, তাহাতে সিরাজ লুৎফ উন্নেসা ব্যতীত আর কাহাকেও যে অধিক ভাল’ বাসিতেন, এরূপ বোধ হয় না।

সিরাজের অন্ত্যান্ত ভাৰ্য্যার সহিত তাঁহার যে বড় বিশেষ সম্বন্ধ ছিল, তাহা আমরা জ্ঞাত নহি। যেখানে তাঁহার বেগমের উল্লেখ দেখিতে পাই, সেই খানে লুৎফ উন্নেসা ব্যতীত আর কাহারও নির্দেশ দেখিতে পাওয়া যায় না। ফলতঃ সুখে দুঃখে সকল সময়ে সিরাজ লুৎফ উন্নেসাকে আপনার সহচরী করিতেন।

সিরাজ যে সকল সময়েই লুংফ উন্নেসাকে নিজ সঙ্গিনী করিতেন, তাহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায়। এই সময়ের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতেছে। সিরাজ বরাবরই অত্যন্ত চঞ্চলচিত্ত ছিলেন। যে তাঁহাকে যে দিকে লওয়াইত, তিনি সেই দিকেই নত হইয়া পড়িতেন। সিরাজের পিতা জৈনুদ্দীন আফগানদিগের হস্তে অতি নিষ্ঠুর ভাবে নিহত হইলে, নবাব আলিবন্দী খাঁ সিরাজকে পাটনার শাসনকর্তার পদ দিয়া রাজা জানকীরামকে তাঁহার সহকারিরূপে নিযুক্ত করেন। কিন্তু সিরাজ অল্পবয়স্ক ও আলিবদীর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র; এজন্য নবাব ‘সিরাজকে আপনার নিকটেই রাখিতেন।

কার্যতঃ রাজা জানকীরামই পাটনা শাসন করিতেন। মেহেদী নেসার খাঁ নামক একজন কর্মচারী সিরাজকে এই রূপ বুঝাইয়া দেয় যে, নবাব সিরাজকে মিথ্যা আশা দিয়াছেন; নতুবা তিনি সিরাজকে প্রকৃতপ্রস্তাবে পাটনা শাসন করিতে দিতেছেন না কেন? সিরাজ তাহাতেই বিশ্বাস করিয়া মেহেদী, নেসারের সহিত জানকীরামের নিকট হইতে পার্টনা অধিকারের জন্য অগ্রসর হইলেন। এই সময়ে তিনি সঙ্গে আর কাহাকেও লন নাই, কেবল লুংফ উন্নেসা ও তাঁহার মাতাকে নিজ যানে লইয়া পাটনা যাত্রা করেন। উক্ত যান দিনে ৩০০৪০ ক্রোশগামী দুইটি সুন্দর বলীবদ্দ দ্বারা চালিত হইত।

সিরাজের এই রূপ হঠকারিতায় মেহেদী নেসার খাঁ হত হন। পরন্ধ সিরাজ আলিবর্দীর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র বলিয়া, যাহাতে তিনি অক্ষতশরীর থাকেন, তজ্জন্য রাজা জানকীরামকে বিশিষ্টরূপ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। সিরাজ জানিতেন যে, এইরূপ। চাপল্যে নানারূপ বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা; তথাপি স্নেহবশে লুৎফ উন্নেসাকে ছাড়িয়া যাইতে পারেন নাই। এই রূপ অনেক দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়।

আমরা লুৎফ উন্নেসার প্রতি সিরাজের প্রগাঢ় ভালবাসার উল্লেখ। করিলাম। এক্ষণে সেই অলোকসামান্যা মহিলার উচ্চহৃদয়ের পরিচয় প্রদান করিতেছি। আলিবর্দীর মৃত্যুর পর ইংরেজদিগের সহিত সংঘর্ষ উপস্থিত হইলে, সিরাজ কাশিমবাজার কুঠী অবরোধ করিয়া তাহার অধ্যক্ষ ওয়াট্‌ট্স সাহেবকে সপরিবারে বন্দী করিয়া মুর্শিদাবাদে লইয়া আসেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024