রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

কোটা আন্দোলন: আলোচনার টেবিলে নয় কেন? 

  • Update Time : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ৮.০০ এএম

মিজান রেহমান

প্রখ্যাত ইতালীয় দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলি যথার্থই বলেছেন,”The innovator makes enemies of all those who prospered under the old Order and only lukewarm support is forthcoming from them who would prosper inder the new”.যার  সহজ বাংলা হলো “যারা পুরানো ব্যবস্থাতে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে তারা নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তকদের শক্র হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি যারা নতুন ব্যবস্থায় লাভবান হবে তারাও সংস্কারকে অত্যন্ত হালকা সমর্থন প্রদান করে”।

বর্তমানে আমাদের দেশে যেকোনো সমস্যা গোলটেবিলে সমাধানযোগ্য হওয়ার কথা যদি না তা ক্ষমতার রদবদল সংক্রান্ত না হয়।দেখা যাচ্ছে ছাত্র সমাজের আন্দোলনটা ক্ষমতার রদবদলের সাথে যুক্ত না।তবে অনেকেই বলছে এটি সাম্রাজ্যে পরিচালনায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে।তারপরও জনসাধারণের সাথে যুক্ত এমন সুযোগ-সুবিধার সংকটকে সরকারের উচিত তা আমলে নিয়ে জরুরি যুক্তি,সাম্য এবং গঠনমূলক সমাধান করা।এর জন্য পুলিশ- ছাত্রলীগকে কেন প্রয়োজন হবে?

সরকার যেহেতু জনগণের সরকার সেহেতু জনগণকে সবার আগে খুশি করা দরকার।চলমান কোটা আন্দোলনে যে পরিমাণ ছাত্রসমাজের অবস্থান দেখা যাচ্ছে সরকার যদি প্রকৃত অর্থে জনগণের সরকার হয়ে থাকতেন তাহলে সম্পূর্ণ জাতির কথায় তিনি ভাববেন গুটিকয়েক মানুষকে খুশি করার চিন্তা করবেন না আশাকরি।কিন্তু প্রশ্ন হলো সংখ্যায় কম এমন আয়োজনে সরকার কেন যুক্ত হতে আগ্রহী?আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু,বাবা হিসেবে তাঁর কাছে সকলেই সমান হওয়া উচিত।

কিন্তু সরকার যাদের জন্য এমন আয়োজন করেছে তাদের বহু সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে।২০২৪ সালে স্বাধীনতার ৫৪তম বছর চলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ে যারা আছে, তারা ইতোমধ্যেই বিশাল বড় একটা অংশ কোটার সুবিধা নিয়ে নিয়েছে।তাদের নাতি-নাতনিদের ভিন্ন উপায়ে চাইলে সম্মানিত করা যায়।এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক সংখ্যা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা এবং মুক্তিযুদ্ধ সনদ নিয়ে রয়েছে নানারকম অনিয়ম।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৮(১),২৮(২),২৯(১) অনুযায়ী চাকরি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সবাইকে যেন সমানভাবে দেখা হয় এবং কারও প্রতি বৈষম্য না করা হয় এসব ব্যাপার রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এবং ২৯(৩)(ক) অনুসারে অনগ্রসর কোন গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার যদি বিশেষ সুবিধা দিতে চায়, সেটা পার্মিসিবল। কোটার সাংবিধানিক ভিত্তি বলতে এই এতটুকুই।(দৈনিক ইনকিলাব,৯ জুন,২৪) তারপরও ছাত্রসমাজ বলছে সংখ্যাটা ৩০% থেকে ১০% বা এর একটা যুক্তিযুক্ত সমাধানে নামিয়ে আনা হোক।যদি মায়ানমারে সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ হয় তাহলে কী কোটাদারীরা সুযোগ আশায় এর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে এবং শুধু কী তাদের দ্বারা এটি সমাধান যোগ্য ?যাতে ৩০+৩০ সমান ৬০% হয় এই আশায় নাকি এতে সমগ্র জাতির অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে।সংকট মোকাবেলায় ছাত্রসমাজ বা বৃহত্তর গোষ্ঠী কিন্তু সুযোগ-সুবিধার বেলায় গুটিকয়েক। এমন কেন হবে? যদি কোটার পরিসংখ্যান দেখি তাহলে কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্বা,১০ শতাংশ নারী,১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা।১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে।-(ইত্তেফাক)

আরেকটা দুঃখজনক বিষয় হলো,ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতা “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং কোটা ইস্যুর যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ইতিবাচক ও যুগোপযোগী সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।এখানে প্রশ্ন হলো যারা এসব মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের ছাত্রত্ব আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলা জরুরি এবং তারা কী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমি পরিবেশ দূষণে যুক্ত কিনা?

যারা কোটার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে এসেছে সকলেই বিশেষত তৃতীয়-চতুর্থ তম গ্রেডে; তাদের দ্বারা সরকার লাভবান হচ্ছে কিনা তাও দেখা জরুরি।লাভের হিসাবটা যদি সরকারের ভাবমূর্তি হিসেবে দেখি তাহলে কোটা মাধ্যমে এসে কী তারা দুর্নীতির সাথে যুক্ত কিনা তাও দেখতে হবে।কারণ বেশিরভাগ দুর্নীতি হয়ে থাকে তৃতীয়-চতুর্থ গ্রেড অর্থাৎ ড্রাইভার বা অফিস সহকারী এমন পোস্টের মাধ্যমে।যারা কিনা অফিস সহায়ক হয়ে প্রথম শ্রেণির চাকরি পেতে সহায়তা করে থাকে কোটির টাকা লেনদেন মাধ্যমে।যা ইতিমধ্যে পত্রিকার মারফত সকলের নজরে এসেছে।

উন্নত বিশ্বে যেটা আমরা দেখি তা হলো তারা সবসময় বহিঃশত্রুের আক্রমণ বা বাধা কীভাবে  প্রতিরোধ বা দমন করবে সেটা নিয়ে কাজ ও নীতি প্রণয়ন করে এবং দেশের মানুষকে শান্ত রাখে যাবতীয় চাহিদা মিটিয়ে।কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া বলি বা বাংলাদেশ এখানে জনসাধারণকে সবসময় দুর্ভোগে ঠেলে দেওয়া হয়।নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে ।জনগণের কল্যাণের কথা খুবই কম ভাবা হয়।যদি জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করা হতো তাহলে এত লুটপাট – দুর্নীতি হতো না।

কাঁচাবাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের এত দাম কেমন করে হয়!এটা হওয়ার কারণ বাংলাদেশের এখনো কোন কলোনি দেশ বা অঞ্চল নেই যাদের থেকে তারা সাম্রাজ্যবাদী আচরণ করে কিছু নিতে পারবে বরং তারা সাম্রাজ্যবাদী দুষ্টু থাবার শিকার।এর ফলে যেটা হয় দুর্নীতির ফলটা ভোগ করতে হয় সাধারণ জনগণকে।অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের যেহেতু কলোনি আছে সে কারণে তাদের দেশে শান্তি বজায় থাকে।

সর্বশেষ যেটা বলা জরুরি যতই যুক্তি-তর্ক করা বা বলা হোক না কেন।যেকোন আদায় সংগ্রাম ছাড়া অর্জন হয় না।তা আমরা ১৮ সালে যেমন দেখেছি এখনো তাও দেখছি।আপনি যদি সক্ষম পর্যায় না যান তাহলে কেউ আপনাকে গুরুত্ব দিবে না।আলোচনার টেবিলে বসতে ডাকবে না -যদি আপনার সাথে বিপক্ষ মতের ২০-৩০ পার্থক্য হয়।তখনই আলোচনায় আসবে পার্থক্য যদি ১৯-২০ ঘরে হয়।

 লেখক: প্রাবন্ধিক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024