রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ নিয়ে মমতা ব্যানার্জীর কোন মন্তব্যে ঢাকার আপত্তি?

  • Update Time : বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪, ১১.৫০ পিএম

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন আর তার পরে সহিংসতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর একটি মন্তব্য নিয়ে ঢাকা থেকে ভারত সরকারের কাছে আপত্তি জানানো হয়েছে।
কলকাতার এক জনসভায় গত রবিবার মিজ ব্যানার্জী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। তবে তার আগে তিনি এটাও বলে নিয়েছিলেন, “আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনও কথা বলতে পারি না কারণ ওটা একটা আলাদা দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে”।
“কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজায় খটখটানি করে আমরা তাদের আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। তার কারণ এটা ইউনাইটেড নেশনসের একটা রেজলিউশন আছে যে কেউ যদি রিফিউজি হয়ে যায় তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্মান জানাবে,” সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান।

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে মমতা ব্যানার্জীর একটি মন্তব্যে আপত্তি তুলেছে ঢাকা

আরও যা বলেছিলেন মমতা

ওই ভাষণ শুনে বিশ্লেষকদের মনে হয়েছিল যে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যক উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে পারেন, এরকম একটা ইঙ্গিত মমতা ব্যানার্জী দিয়েছিলেন।

এছাড়াও তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনও প্ররোচনা, উত্তেজনায় না যাই। আমাদের সহমর্মিতা, আমাদের দু:খ, সে যারই রক্ত ঝরুক, তাদের জন্য আছে। আমরা দুঃখী, আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের মহান প্রাণ, তাজা প্রাণগুলো চলে যাচ্ছে”।
সেদিনই বিকেলে মিজ ব্যানার্জী একটি টুইট করেন, যাতে লেখা হয় “বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো ছাত্র এবং অন্যান্যরা পশ্চিমবঙ্গ আর ভারতে ফিরে আসছেন। আমি রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তাদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হয়”।

কী বলছে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’ এমন টুইট প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মি. মাহমুদ জানান, তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, তার সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ঠ এবং উষ্ণ। কিন্তু তার এই বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারকে নোট দিয়ে জানিয়েছি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনে ওই নোট পাঠানো হয়েছে। তবে দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।
আবার মমতা ব্যানার্জী ঠিক কী বলেছিলেন, সেটা পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর সিভি আনন্দ বোসও জানতে চেয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস দল ব্যাখ্যা দিচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুরা চলে এলে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেওয়া হবে, এমন কথা মমতা কখনই বলেন নি।

তৃণমূলের ব্যাখ্যা
মমতা ব্যানার্জীর ওই ভাষণ নিয়ে বিজেপি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এখন বাংলাদেশ সরকারও বলছে যে তার ওই ভাষণের ফলে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াতে পারে।
এখন অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস বলছে যে মমতা ব্যানার্জী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কথাই বলতে চেয়েছিলেন সেদিন।
দলের অন্যতম মুখপাত্র মনোজিত মণ্ডল বলছিলেন, “এর মধ্যে বিভ্রান্তির কোনও জায়গা নেই। একেবারেই এরকম কোনও কথা তিনি বলেন নি যে যারা আসতে চাইছেন, চলে আসুন ইত্যাদি। তিনি যেটা বলেছিলেন যে অনেকেই যারা ওখানে পড়তে গেছে, তারা হয়ত ভয় পাচ্ছে, তাদের কেউ যদি এখানে আশ্রয় নিতে চায়, সেক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে, সেই অনুযায়ী হবে। তবে তিনি এটাও বলেছিলেন যে তিনি একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চান না। এটা একটা মানবিক আবেদন ছিল, বাঙালী – বাংলা ভাষার আবেগ থেকে তিনি বলেছিলেন কথাটা।“
“বাংলাদেশ সরকারকেও আমি বলব যে কোনও বিভ্রান্তির জায়গা নেই। মমতাদি একটা মানবিক আবেদন করেছেন এবং সেটাও ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে যারা সত্যিই সেখানে সাফার করছে,” বলেন মি. মণ্ডল।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নথি যাচাই করছে বিএসএফ সদস্যরা

সীমান্ত পেরিয়ে কত মানুষ এলেন?

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহ থেকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তার পরে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা অন্যান্য রাজ্যগুলিতে চলে এসেছেন, বাস্তব এমনটা নয়।
বিএসএফ জানিয়েছে সীমান্ত চৌকিগুলি দিয়ে ৪৩১৫ জন মানুষ ভারতে প্রবেশ করেছে।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পূর্ব কমাণ্ডের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী বিগত চার দিনে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেছেন যারা, তাদের বেশিরভাগই ভারতীয়, ৪১ জন বাংলাদেশের নাগরিক, এক হাজারের কিছু বেশি নেপালি। এছাড়াও ভূটান, মালদ্বীপ এবং একজন কানাডার নাগরিকও বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন।
এরা মূলত ভারত এবং অন্যান্য দেশের ছাত্রছাত্রী, যারা বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। এদের সুবিধার জন্য সীমান্ত চৌকিগুলি বাড়তি সময় খোলা রাখা হচ্ছে এবং একটি সহায়তা ডেস্কও চালু রেখেছে বলে বিএসএফ জানিয়েছে।
এর বাইরে বহু মানুষ ‘উদ্বাস্তু’দের মতো ভারতে চলে এসেছেন, এরকম ঘটনা হয় নি বলেই দাবি বিএসএফ কর্মকর্তাদের। তবে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে ভারত নজরদারি বাড়িয়েছে সীমান্তে।
পূর্ব কমান্ডের প্রধান, অতিরিক্ত মহা-নির্দেশক রবি গান্ধী ‘অপারেশন অ্যালার্ট’ চালু করেছেন, যাতে সীমান্তের ওপারের ঘটনাক্রমের দিকে বিএসএফ নজর রাখতে পারে এবং যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায়।

বিবিসি নিউজ বাংলা

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024