সারাক্ষণ ডেস্ক
পশ্চিম দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস দেশের পূর্বাঞ্চলের আকাশে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা লঘুচাপ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালীর সীমানায় চলে আসে। আর মৌসুমি বায়ুও এ সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই তিন মিলে বিপুল পরিমাণ মেঘ কুমিল্লা-নোয়াখালীর আকাশে স্তরে স্তরে জমা হয়। একসময় তা বিস্ফোরিত হয়ে জনপদে নেমে আসে। আবহাওয়াবিদেরা এটাকে বলছেন মেঘ বিস্ফোরণ বা ‘ক্লাউড ব্লাস্ট’।
এই মেঘ বিস্ফোরণের শুরু ১৯ আগস্ট সকালে। এরপর টানা তিন দিন প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে আসা ঢল দেশের পূর্বাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। মেঘ বিস্ফোরণ বিস্তৃত ছিল ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা-ফেনী পর্যন্ত ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট এ এলাকায় অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে।
আকস্মিক এ বন্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবহাওয়াবিদেরা এমন তথ্য জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে পূর্ব এশিয়া হয়ে চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় কয়েক বছর পরপর এ ধরনের মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে নামা এ ধরনের অতি বৃষ্টির পানি সহজে বের হতে পারছিল না। কারণ, নদী-খাল-জলাশয়গুলো ভরাট ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশীদ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দেড় যুগ ধরে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে রংপুর অঞ্চলে এ ধরনের মেঘ বিস্ফোরণ হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১১টি জেলার ৭৭ উপজেলার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। আর আকস্মিক এই বন্যায় গত চার দিনে দুই নারীসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গতকাল শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো—ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। বন্যায় দেশের ৭৭টি উপজেলা ও ৫৮৯টি ইউনিয়ন-পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় নিহতদের মধ্যে কুমিল্লায় চার, ফেনীতে এক, চট্টগ্রামে চার, নোয়াখালীতে এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক ও কক্সবাজারে তিন জন রয়েছেন। ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও তাদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন লোক ও ১৭ হাজার ৮৪৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিত্সাসেবা প্রদানের জন্য ৬৩৭টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরো জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য বিভিন্ন জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিক্যাল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য দুদকের সকল কর্মকর্তাদের এক দিনের বেতন প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যাংক খোলার সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ তহবিলে অর্থ জমা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ডুসার দ্বিতীয় মেয়াদের কমিটির সভাপতি মো. নাজমুচ্ছায়াদাৎ বলেন, দেশের এই দুর্যোগের মুহূর্তে আমরা বন্যা দুর্গত সাধারণ জনগণের পাশে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কালাম বলেন, দুদক কর্মচারীগণ দেশ সেবায় নিয়োজিত। তারই অংশ হিসেবে বন্যাদূর্গতদের পাশে থাকবে দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
ডুসার সাবেক সভাপতি মো. মশিউর রহমান এক দিনের বেতন দেয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দেশের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি আমরা মানবিক দায়িত্বও পালন করবো মর্মে অঙ্গীকার করেছি।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করেছে বিজিবি। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে রাত ১০টার দিকে ডনা বিজিবি ক্যাম্পে তাকে আটক করা হয়। বিজিবি সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্থানীয় দালাল ধরে তিনি ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন। আটকের সময় স্থানীয়দের তিনি জানান, তার সঙ্গে বাংলাদেশি এবং বৃটিশ পাসপোর্ট আছে। নগদ টাকা আছে ৪০ হাজার। আগের দিন তার সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা দুই যুবক মারধর করে নিয়ে গেছে। শুধু সীমান্ত পারের জন্য নৌকার মাঝিকে ১৫ হাজার টাকা দেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায় বিচারপতি মানিককে প্রশ্ন করছেন কয়েকজন। এসময় তিনি তার নাম বলছেন। নিজের অসুস্থতার কথা বলছেন। দালালদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার কথা বলেন।
তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার তথ্য জানান।
কেন পালাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন ভয়ে পালাচ্ছি। কার ভয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রশাসনের।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায় জঙ্গলে কলাপাতা বিছিয়ে তিনি শুয়ে আছেন। কেউ একজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তাকে টাকা দেয়ার কথা বলছেন। ওই ব্যক্তি বলছেন আমাদের টাকা লাগবে না।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মানিক বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোর সমর্থক ছিলেন। সরকারের কার্যক্রম সমর্থন করে টকশোতে আলোচনা করতেন। সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।
Leave a Reply