সারাক্ষণ ডেস্ক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আগের সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। কয়েকজনকে অব্যাহতি ও অনেককে বদলি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি এবং এই ক্ষেত্রে বিগত সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপের কারণে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে শেখ হাসিনা সরকারের সময় পদোন্নতিবঞ্চিত বা কোণঠাসা করে রাখা পুলিশ কর্মকর্তাদের একটা অংশ পুলিশ সদর দপ্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাঁরা কাকে কোথায় বদলি করা হবে, কারা পদোন্নতি পাবেন; এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত এবং আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক তালিকা তৈরি করেছে একাধিক পক্ষ। এর ফলে পেশাদার কর্মকর্তাদের অনেকে অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগ শুরু হয়েছে, যা চলছে এখনো। কোনো কোনো উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, কেউ কেউ ছাত্রদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন। আর উপাচার্যদের একটি অংশ আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার কোনো কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ ঠেকাতে ছুটিতে গেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করছেন উপাচার্য। আর অনেকে পদত্যাগ এড়াতে ছুটি নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, মামলা করেছেন। এ কারণে এসব শীর্ষ কর্মকর্তা পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, পদত্যাগ, আত্মগোপন ও ছুটিতে থাকার কারণে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যশূন্য। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষও পদত্যাগ করছেন। গতকাল সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করতে দ্রুত পদায়ন করা হবে। তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো চালু করতে হবে। আমরা চাইব, সত্যিকার শিক্ষানুরাগী, যোগ্য এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে। আমরা চেষ্টা করব, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতে অতিদ্রুত পদায়ন হয়।
টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন ৫ আগস্টই পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকেই মূলত উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে।
পদত্যাগের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নূরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম কামরুজ্জামান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ।
এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খান, গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের তালিকা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ১৩ দিন পর তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র ‘দৈনিক বাংলা’র প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘দেশের সর্বত্র চালের দাম কমেছে’। ২৮ আগস্ট প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের সর্বত্র চালের দাম আরো কমেছে। পাবনা ও জয়পুরহাটে বুধবার চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল প্রতি মণ ৮০ টাকা। রাজধানী ঢাকায়ও গত নয়দিনে বিভিন্ন চালের দাম মণপ্রতি ৪০ থেকে ৭০ টাকা কমেছে। শ্রীমঙ্গলে চালের দাম ১০০ টাকায় নেমেছে। নেত্রকোনায় গত ১০ দিনে চাল মণপ্রতি ৪০ থেকে ১৬০ টাকা কমেছে। চালের দাম কমায় সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে স্বস্তির ভাব। চালের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও কমতে শুরু করেছে। ঢাকার চাল ব্যবসায়ীদের অভিমত, চালের দাম আরো কমবে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতিতে আসে আমূল পরিবর্তন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে; দাম কমে খাদ্যশস্য, কাপড়-চোপড় ও শিশুখাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের। এ সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা একেবারে আড়ালে চলে যান। ওই বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ১৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রেখে শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে।
এদিকে দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেখে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এর মধ্যে শেষ দুই বছরের প্রায় প্রতি মাসেই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড তৈরি হয়। সর্বশেষ জুলাইয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ সাধারণ মূল্যস্ফীতি এবং ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে খন্দকার মোশতাক আহমেদ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ সফল করতে পেরেছে। এ অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা জনসাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দ্রুতই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে শেখ মুজিবকে হত্যার পর ওইদিনই রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা নেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। এর পর থেকে খাদ্যমূল্য ক্রমাগত কমতে থাকে। খাদ্যমূল্য হ্রাসের প্রবণতা দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকে। তৎকালীন প্রকাশিত দুটি জাতীয় দৈনিকের অন্তত পাঁচ মাসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট দৈনিক বাংলার এক প্রতিবেদনে তৎকালীন শিল্প প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বরাত দিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের শিল্পে উৎপাদন সন্তোষজনক। সংশ্লিষ্ট করপোরেশনগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন অনেকে। নতুন সরকারের ঘোষণার পর বর্তমানে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা করা হলেও এতদিনে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেকের পরিবার। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রোগীরা বলছেন, হাসপাতালে যতদিন আছি চিকিৎসা বিনামূল্যে পেলেও বাড়ি ফেরার পর দীর্ঘদিন ধরে চলা এই চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে জোগাড় করবো তাই নিয়ে আছি দুশ্চিন্তায়।
গতকাল সরজমিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির নিচতলার ক্যাজুয়ালিটি-২ এর ৫৬টি বেডের সব কয়েকটিতেই ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৬ জন রোগী। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় এদের কারোর পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারোর আবার পায়ে লোহার রড লাগানো হয়েছে। কারোর আবার গুলি লেগে হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এমনই একজন মেহেদী আলম। গত ১৮ই জুলাই গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গত একমাস ধরে পঙ্গুর ক্যাজুয়ালিটি-২ এর জি-০১ নম্বর বেডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর চার বোন দুই ভায়ের সংসারের হাল ধরতে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসেন মেহেদী। গুলশান-১ নম্বর এলাকায় একটি ফুলের দোকানে কাজ করতেন তিনি।
কাজ শেষ করে রাত আটটার পর মধ্য বাড্ডার বাসায় ফিরছিলেন। এরমধ্যেই গুলিবিদ্ধ হন মেহেদী। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। ঢাকা মেডিকেল থেকে ওই রাতেই আনা হয় পঙ্গুতে। মেহেদীর বড় বোন ডালিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ভায়ের ৭টা অপারেশন করা হয়েছে। আরও কয়টা করা লাগবে তার ঠিক নেই। এ পর্যন্ত হাসাপাতালে চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ওর পায়ের হাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেছে। নার্ভ (শিরা) ছিড়ে গেছে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। তাই বাড়িতে ফেরার পর কীভাবে সেই টাকা জোগাড় করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
গত ১৮ই জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একই ওয়ার্ডের জি-৬ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন পল্লবী মাজেদুল ইসলাম মডেল হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. সিফাত। তারও গুলি লেগে ডান পায়ের হাঁটুর জয়েন্টের হাড় ভেঙে যায়। সিফাত বলেন, ওইদিন আমি সন্ধ্যার পর মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় অবস্থান করছিলাম। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ একদল পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে এগুতে থাকে। এ সময় আমরা সকলে ভয়ে দৌড়ানো শুরু করি। আমি দৌড়ে প্রায় ৫০/৬০ জনকে অতিক্রম করে চলে আসি। এরপর হঠাৎ আমার পায়ে গুলি লাগলে আমি পড়ে যাই। ওই সময় আমার বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে আলোক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়। সিফাতের মা বলেন, আমার ছেলের হাঁটুর জয়েন্টের হাড় ভেঙে গেছে। গত একমাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি। সুস্থ হতে আরও কয়দিন লাগবে তা জানা নেই। প্রতিদিন বাসায় যাওয়া, আসা, খাবার খাওয়া, চিকিৎসা ব্যয় দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের ৭৫ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। এখন হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ টেস্ট, ওষুধ ফ্রী দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খরচ যা, তা আগেই হয়ে গেছে। খাওয়া-দাওয়া, যাওয়া-আসা তো আছেই। এরপর হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার পর কতো কী লাগবে তা আল্লাহ জানে। সিফাতের বেডের পাশেই জি-৭ নম্বর বেডে মাসখানিক ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেলিভারিম্যান শিমুল আহমেদ। গত ১৯শে জুলাই তিনিও গুলিবিদ্ধ হন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায়। তার গুলি লাগে ডান পায়ের উরুতে। শিমুল বলেন, আমার বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে। আমি ঢাকায় দোকানে দোকানে মাল ডেলিভারি দিই। সেদিন আমার কাজ বন্ধ থাকায় আন্দোলনে যোগ দিই। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ আন্দোলনকারীদের ওপর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা থেকে গুলি করছিল পুলিশ। গুলির শব্দ শুনে আমি ও আমার বন্ধুরা মিরপুর ১১’র দিকে দৌড়ানো শুরু করি। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পার করতেই গলির মধ্য থেকে কে বা কারা গুলি ছোড়ে। সেই গুলি লেগে আমার পা রক্তাক্ত হয়। বন্ধুরা তখন আমাকে উদ্ধার করে আলোক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়। প্রথম দুই-তিন দিনেই আমার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন বাসায় ফেরার পর তো সহজে কোনো কাজে যোগ দিতে পারবো না। তাই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি।
Leave a Reply