শ্রী নিখিলনাথ রায়
যে উধুয়া পার হওয়ার চেষ্টা করিল সে অমনি নালাগর্ভে নিষ,অত হইল। নবাব-সৈক্স- গণ যতক্ষণ পাবিল, ইংরেজ-সৈন্ধ্যের সহিত যুদ্ধে একে একে প্রাণ বিসর্জন দিল। এই আক্রমণে নবাৰপক্ষের প্রায় ১৫ হাজার সৈঞ্জ বিনষ্ট হয়; তাহাদের অনেকগুলি কামানও ইংরেজেরা হস্তগত করেন। ৫ই সেপ্টেম্বর প্রাতঃকালে সাতটার সময় সমস্ত শিবির ইংরেজদিগের অধিকৃত হইয়া যায়। সমরু ও মার্কারের সৈন্যেরা ইংরেজদিগকে বাধা দিবার জন্য চেষ্টা করিয়াছিল; কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারে নাই। তাহারা অবশেষে উধুয়া পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হয়।
ইংরেজেরা উধুয়া হইতে রাজমহলে উপস্থিত হইয়া, পরে মুঙ্গের অভিমুখে যাত্রা করেন। মীর কাশেম ইতিপূর্ব্বে মুঙ্গের পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তাঁহার মুঙ্গের পরিত্যাগের পূর্ব্বে জগৎশেঠ প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদিগকে গঙ্গাজলে নিমজ্জিত করিয়া বধ করা হয়। মীর কাশেম পলায়ন করিয়া প্রথমে অযোধ্যার নবাব সুজা উদ্দৌলার শরণাপন্ন হন; সুজা উদ্দৌলা পরে মীর কাশেমের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ায়, মীর কাশেম তাঁহার আশ্রয় পরিত্যাগ করিয়া, বঙ্গরাজ্যের পুনরধিকারের আশা বিসর্জন দিয়া, রোহিল খণ্ড অভিমুখে পলায়ন করেন।
এইরূপে উধুয়ানালায় মীর কাশেমের সমস্ত সৈন্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। পলাশী ও উধুয়ানালা এই দুই স্থানে বাঙ্গলার মুসল্যান-গৌরব চিরদিনের জন্য অন্তর্হিত হয়। দুঃখের বিষয়, এই দুই স্থানেই বিশ্বাসঘাতকতা ও চাতুরীর সাহায্যে ইংরেজেরা জয় লাভ করিয়াছিলেন। পলাশী অপেক্ষা উধুয়ানালা আক্রমণে ইংরেজদিগের সাহসের কিঞ্চিৎ প্রশংসা করা যাইতে পারে; কিন্তু সে সাহসপ্রদর্শনের মূল নবাবসৈন্যের অসতর্কতা।
ইংরেজেরা যেরূপ অসমসাহসিকতা অবলম্বন করিয়া উধুয়ানালার শিবির: আক্রমণ করিয়াছিলেন, যদি নবাবসৈন্যের একজনমাত্রও সতর্ক থাকিত, তাহা হইলে, তাঁহাদিগকে উধুয়াপর্ব্বতপ্রান্তস্থিত ঝিলজলে চিরদিনের জন্য নিমজ্জিত হইয়া থাকিতে হইত। আবার, এই অসমসাহসিকতা একজন বিশ্বাসঘাতকের মন্ত্রণার উপর নির্ভর করিয়াছিল। ইংরেজ- স্যৈ স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া, এই অসমসাহসিকতা প্রদর্শন করে নাই। যদি সেই বিশ্বাসঘাতক ইংরেজশিবিরে উপস্থিত না হইত, তাহা হইলে, ইংরেজদিগের সাহসের পরিচয় বিঘোষিত হইত কি না, তাহা কে বলিতে পারে?
Leave a Reply