সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৬৬)

  • Update Time : রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সুতরাং একজন বিশ্বাসঘাতকের মন্ত্রণানুসারে এরূপ সাহস প্রদর্শন যে সমধিক প্রশংসনীয়, এ কথা আমাদের মনে স্থান পায় না। উধুয়ানালার যুদ্ধকে প্রকৃত যুদ্ধও বলা যাইতে পারে না। যদিও নবাবসৈন্তগণ ইংরেজ সৈন্যকর্তৃক শিবির মধ্যে আক্রান্ত হইয়া কিছু- ক্ষণ পর্য্যন্ত প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়াছিল, কিন্তু তাহা আত্মরক্ষার নিমিত্তই বলিতে হইবে। তাহার মধ্যে অনেকে অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণ করিবার অবকাশ পর্যন্ত পায় নাই। সুতরাং এরূপ যুদ্ধকে একটি প্রধান যুদ্ধ বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে না। মীর কাশেমের সহিত ইংরেজদিগের শেষ যুদ্ধ গিরিয়াতেই হইয়াছিল।

উধুয়ানালার যুদ্ধকে প্রকৃত যুদ্ধ না বলিয়া, বরং ইংরেজসৈন্য-কর্তৃক নবাবশিবির আক্রমণই বলা যুক্তিযুক্ত। ইংরেজদিগের অসাধু ব্যবহারের জন্য যেমন পলাশীর যুদ্ধ ঘটে, উধুয়ানালাযুদ্ধের পূর্ব্ব কারণও তাহাই। ইংরেজদিগের কৃত অবমাননায় ও অত্যাচারে জর্জরিত হইয়া, মীর কাশেমকে অস্ত্রধারণ করিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। তিনি • ইংরেজদিগের অসদ্ব্যবহারে এতদূর ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন যে, কোন দেশীয় গ্রন্থকার লিখিয়াছেন, মীর কাশেম কোন নির্দিষ্ট দিবসে যেখানে যত ইংরেজ ছিল, তাহাদিগের মস্তকচ্ছেদ করিবার জন্য স্বীয় কর্মচারীদিগকে আদেশ দিয়াছিলেন।

কিন্তু তৎকালে ভাগ্য ইংরেজদিগের যেরূপ সহায় ছিল, তাহাতে মীরকাশেমের শতচেষ্টা কার্য্যে পরিণত হইতে পারে নাই। তিনি স্বীয় সৈন্যদিগকে ইউরোপীয় রণকৌশলে সুশিক্ষিত করিয়াও। ইংরেজদিগের ক্ষমতা হ্রাস করিতে সমর্থ হন নাই। তাঁহার ইউরোপীয়’ কর্মচারিগণের যথেচ্ছ ব্যবহারে এবং তাঁহার দেশীয় কর্মচারিগণের সাহসাভাব ও বিলাসিতার জন্য তাঁহার অধিকাংশ চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছিল। বিশেষতঃ তাঁহার কোন কোন সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা তাঁহার অনেক কার্য্যের বিঘ্ন উৎপাদন করিয়াছিল। এতদ্ভিন্ন তাঁহার নিজের এক মহাদোষ ছিল যে তিনি প্রায়ই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকিতেন না।

যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকিলে সৈন্যদিগের যে দ্বিগুণ উৎসাহ হয়, তাহা তিনি বুঝিতে পারেন নাই। কোন ইংরেজ লেখক লিখিয়াছেন যে, যদি মীর কাশেমের অধীন সেনাপতিগণ আপনাদিগের সাহসের খর্ব্বতা না দেখাইত, অথবা তিনি সমরক্ষেত্রে স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়া স্বীয় সৈন্যদিগকে উৎসাহিত করিতে চেষ্টা পাইতেন, তাহা হইলে সে সময় হইতে বঙ্গরাজ্যে ইংরেজদিগের যে সামান্যমাত্র ভূভাগও থাকিত না, তাহা অনেকটা নিঃসন্দেহরূপে বলা যাইতে পারে।। মীর কাশেম হইতে মুর্শিদাবাদ বা বাঙ্গলার মুসলমান স্বাধীনতা চিরদিনের জন্য অন্তর্হিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024