লুসি ক্যাভেনডিশ

শুক্রবার সন্ধ্যা। লন্ডনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের এক রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছি আমার ডেটের জন্য। এ ধরনের জায়গায় আমি সাধারণত যাই না—মেফেয়ারের এই রেস্টুরেন্টটি এতটাই বিলাসবহুল যে, এখানে উপস্থিত সবাইকে দেখলে মনে হয় তাদের কাছে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এটি আমাদের প্রথম ডেট ছিল না, তবু সে আমাকে এত ব্যয়বহুল জায়গায় নিয়ে আসবে, তা ভাবিনি। মনে হচ্ছিল আমি হয়তো সঠিক পোশাক পরিনি। আশেপাশের পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা পরিপাটি পোশাকে সজ্জিত, আর আমি ৫৫ বছর বয়সে (এখন ৫৮) লেদারের মিনি ড্রেস, কালো লম্বা বুট এবং কৃত্রিম পশমের জ্যাকেট পরেছিলাম।

কিন্তু সমস্যাটা শুধু পোশাকেই ছিল না। মূল সমস্যা ছিল, যার সঙ্গে ডেট করছিলাম, সে আমার চেয়ে প্রায় ২৫ বছরের ছোট। আমার মনে হচ্ছিল, সবাই আমাদের বয়সের পার্থক্য নিয়ে কথা বলবে। কেনই বা বলবে না? পার্থক্যটা তো স্পষ্টই ছিল।

ঠিক তখনই ২৯ বছর বয়সী ডেরিয়াস এসে পৌঁছালো। তার চলার ভঙ্গি ছিল আত্মবিশ্বাসী ও খুশির। সে তীক্ষ্ণ কাটের স্যুট, লম্বা উলের কোট এবং স্টাইলিশ টুপি পরেছিল। হাতে বড়সড় ফুলের তোড়া, মুখে উজ্জ্বল হাসি। তাকে দেখেই বুঝলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে।

সে এসে আমার হাত ধরলো, আর তখনই আমার সমস্ত চিন্তা উধাও হয়ে গেল। আমরা রাতটা দুর্দান্ত কাটালাম; ডিনারের পর নাচতে গেলাম, তারপর তার ফ্ল্যাটে ফিরে এক অসাধারণ রাত কাটালাম। সবার চিন্তা এবং নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো যেন জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

প্রথম সাক্ষাৎ

ডেরিয়াসের মধ্যে এমন এক উচ্ছ্বাস ছিল, যা আমি আগে কোনো পুরুষের মধ্যে দেখিনি। সেই আনন্দই প্রথম আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।
লন্ডনের পশ্চিম প্রান্তের এক পাবের বারে দাঁড়িয়ে দুটি বাদামের প্যাকেট কিনছিলাম। বারটেন্ডার বলল দাম দশ পাউন্ড। অবাক হয়ে বললাম, ‘দশ পাউন্ড? মাত্র দুটি বাদামের প্যাকেটের জন্য?’ হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলল, ‘আমি দেব, তোমাকে একবার ট্রীট দিতে চাই।’
পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি, এক আকর্ষণীয়, মজার, বুদ্ধিমান, এবং আমার চেয়ে অনেক ছোট একজন লোক। কথা বলার পর সে আমার নাম্বার চাইল… এবং আমার মনে হল, ‘কেন নয়?’

আমি ভেবেছিলাম সে আর যোগাযোগ করবে না, কিন্তু পরে সে মেসেজ পাঠালো, আমি নিরাপদে বাড়ি ফিরেছি কিনা তা জানতে। পরদিন সকালে সে মেসেজ করল, ‘তোমার দিনটা সুন্দর কাটুক।’ সেখান থেকেই শুরু হলো আমাদের সম্পর্কের যাত্রা।

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

নতুন ব্রিজেট জোন্স সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে, যেখানে ব্রিজেট (রেনি জেলওয়েগার) তার চেয়ে অনেক ছোট এক পুরুষের সঙ্গে ডেট করছে। সমাজে সবসময়ই পুরুষদের জন্য কম বয়সী নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখা হয়, কিন্তু এর বিপরীতটা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর।
অনেকেই মেনে নিতে পারে না যে, একজন ২৯ বছর বয়সী পুরুষ ৫০-এর কোঠায় থাকা একজন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে পারে। তবুও, আমার প্রজন্মের নারীরা ব্যাপকভাবে তাদের বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসছে।

সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ

ডেরিয়াসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় দুই বছর স্থায়ী ছিল, কিন্তু আমি জানতাম এটি একদিন শেষ হবে। আমি মিথ্যে বলা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম এবং এমন একজন সঙ্গী চেয়েছিলাম, যাকে আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে পরিচয় করাতে পারি, যে আমার জীবনের অংশ হতে পারে। ডেরিয়াসকে নিয়ে আমি গোপনীয়তার মধ্যে ছিলাম এবং সেই গোপনীয়তা আমাকে ক্লান্ত করছিল।

অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সম্পর্কটি শেষ করার। যদিও ডেরিয়াসের সঙ্গে আমার সময়গুলো ছিল অসাধারণ, তবুও আমি জানতাম আমাদের ভবিষ্যৎ একসঙ্গে নয়।

উপলব্ধি ও শিক্ষা

ডেরিয়াস আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সে আমাকে ভালোবাসার উষ্ণতা, উদারতা এবং সততার মূল্য বুঝিয়েছে। সে আমাকে আমার শরীরকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, কারণ সে আমার প্রতি অতুলনীয় আকর্ষণ অনুভব করত।
যখনই তার কথা মনে পড়ে, আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

এই সম্পর্কের মাধ্যমে আমি শিখেছি, জীবনে কখনো কখনো নিয়ম ভেঙে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়, এবং বয়স কখনোই ভালোবাসার অন্তরায় নয়।