বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অভাব এবং দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কারণে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।

অস্থায়ী সরকারের সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর সম্প্রতি মন্তব্য করেন, অস্থায়ী সরকারের পক্ষে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠনের ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, আংশিক পুনর্গঠন সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও মব ভায়োলেন্স

বাংলাদেশে গণপিটুনি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকারিতার হ্রাস অর্থনৈতিক খাতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সঠিক নিরাপত্তা ও সহায়তার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, এই খাতে চলমান বিশৃঙ্খলা অস্থায়ী সরকারের স্বল্পমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মূল কাঠামোগত সমস্যাগুলো নিরসন হচ্ছে না।

বিদেশি বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৭৬২ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত সহায়তা চাইলেও, আইএমএফ কঠোর শর্ত দিয়েছে যাতে রাজস্ব শৃঙ্খলা এবং কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্বব্যাংক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে, অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার ও উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

স্থিতিশীল সরকারের প্রয়োজনীয়তা

বিশেষজ্ঞরা একমত যে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। একটি স্থিতিশীল সরকার ধারাবাহিক নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারে, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারে এবং বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আস্থার অভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে প্রধান বাধা। একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল সরকার গঠনই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে, আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি।