শ্রী নিখিলনাথ রায়
আমি যখনই তাহাদিগকে আহবান করি- য়াছি, তখনই তাহারা আমার আদেশ অমান্য করিয়াছে এবং আমাকে তাহাদের শত্রু ও রাজ্য হইতে বিতাড়িত মনে করিয়াছে। আমার কার্য্য নির্ব্বাহের জন্য তাহাদিগের বিশেষ আবশ্যক এক্ষণে হইয়াছে বলিয়া, আমি তাহাদিগকে আহ্বান করিয়াছি। আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আপনারা প্রতিদিন সিপাহী পাঠাইয়া আমার আমীন ও অন্যান্য কৰ্ম্ম- চারীদিগকে ধৃত করিয়া অযথা অত্যাচারের সহিত তাহাদিগকে বন্দী করিয়া রাখিতেছেন। আপনাদের ঐরূপ ব্যবহারে সন্ধিভঙ্গ হয় না, অথচ আমি আমার অধীন লোকদিগকে নিজের প্রয়োজনের জয় আহবান করিলে, অমনি সন্ধিভঙ্গ হইয়া যাহ!!
আমি তাহাদিগকে সরকারের ও তাহাদের নিজের কার্যানিব্বাহের জরা মুঙ্গেরে আনয়ন করি- হাছি; তাহাদিগকে এখানে আনিবার অল্প কোন উদ্দেপ্ত নাই।” ইহার পর ক্রমে ইংরেজদিগের সহিত মীরকাসেমের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, নবাব কাটোয়া, গিরিয়া, উধুয়ানালা প্রভৃতি স্থানে পরাজিত হইয়া মুঙ্গেরে জগৎশেঠ ও অম্লান্ত বন্দী কন্মচারী এবং রাজা ও জমিদারদিগের বিনাশ সাধন করেন। জগৎশেঠ মহাতপচাঁদকে অত্যুচ্চ দুর্গশিখর হইতে গঙ্গাগর্ভে নিক্ষেপ করা হয়। মহারাজ স্বরূপচাঁদও ঐ সঙ্গে ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হন।
জগৎশেঠ মহাতপচাঁদ ও মহারাজ স্বরূপচাঁদের মৃত্যুর পর তাঁহাদের জ্যেষ্ঠপুত্র খোশালচাঁদ ও উদ্বায়ংচাঁদ তাঁহাদের উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করেন। ১৭৬৬ অব্দে বাদশাহ শাহআলমের নিকট হইতে খোশালচাঁদ জগৎশেঠ ও উদায়ংচাঁদ মহারাজ উপাধি প্রাপ্ত হন। তাঁহারা মহাতসচাদ ও স্বরূপচাঁদের ব্লার এক সঙ্গে কারবার চালাইতেন। এই সময় হইতে তাঁহাদের ব্যবসায় মন্দীভূত হইতে আরম্ভ হয়।
১৭৬৫ খৃঃ অব্দের মে মাসে তাঁহারা ক্লাইবকে আপনাদের গুরবস্থার কথা লিখিয়া পাঠান। তাহাতে তাঁহাদের কনিও ভ্রাতাদের শোচনীয় অবস্থার কথা আরও বিশদ রূপে উল্লিখিত থাকে। খোশালচাদ ও উদায়ংচাঁদ ব্যতীত মহাতপচাদের গোলাপচাঁদ ও স্বরূপচাদের মিহির- চাঁদ নামে পুত্র ছিল। যৎকালে মহাতপচাদ ও স্বরূপচাঁদ বন্দী অবস্থায় মুঙ্গেরে অবস্থিতি করিতেছিলেন, সেই সময়ে গোলাপচাঁদ ও মিহিরচাঁদ তাঁহাদের সহিত তথার বন্দী-অবস্থায় কালযাপন করেন। মহাতপচাঁদ ও স্বরূপটাদের মৃত্যুর পর, তাঁহারা মীর কাসেমের সহিত মুঙ্গের হইতে গমন করিতে বাধ্য হন।
Leave a Reply