শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

সাগরে লঘুচাপের আভাস, পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়েও

  • Update Time : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ৩.১১ পিএম
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে

জান্নাতুল তানভী

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বুধবার বা বৃহস্পতিবারের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটা লঘুচাপ তৈরি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যা পরবর্তীতে ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর সেটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে।

সাধারণত মে ও জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে থাকে। এ বছরও এ মাসেই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।

এখন পর্যন্ত পাওয়া সব ধরনের অবস্থা বিবেচনা করে আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস বলছে, লঘুচাপ তৈরি হওয়ার পর অন্তত তিনটি ধাপের প্রতিটি পার হয়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে এ সপ্তাহের শেষেই আঘাত হানতে পারে।

যে পূর্বাভাস আবহাওয়া অধিদপ্তরের

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর – পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বুধবার বা বৃহস্পতিবারের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং এ সংক্রান্ত এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরে এটি ঘণীভূত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বুধবারের মধ্যে দক্ষিণ – পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটা লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। যা পরবর্তীতে ঘনীভুত হয়ে নিম্নচাপে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে”।

“বর্তমান যে প্রেডিকশন তাতে দেখা যাচ্ছে এটা বাংলাদেশ, মিয়ানমার বা ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, উড়িশ্যা এই অঞ্চলের দিকেই এর গতিপথ। তবে এর গতিপথ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে”।

“২২শে মে লঘু চাপ তৈরি হলে, ২৩ বা ২৪শে মের মধ্যে তা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে ২৪শে মে রাতে বা ২৫শে মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে” বলেন মি. ফারুক।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোন সতর্কতা দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “লঘুচাপ তৈরি হওয়ার পরে ওয়ার্নিং দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে”।

তবে, কোন এলাকায় এটি আঘাত হানতে পারে এমন প্রশ্নে মি. ফারুক জানালেন, “ প্রতিনিয়ত এটার গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, রাতে একটা গতিপথ থাকছে আবার সকালে আরেকটা হচ্ছে”।

“ অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত না লঘুচাপ তৈরি হয়ে সেটা নিম্নচাপে রূপ নেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তার আগের সব গতিপথ পরিবর্তন হবে। যখন নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে তখন গতিপথ স্থির হবে। তখন স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে ”।

মি. ফারুক বলেন, “ যখন এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে এর নাম হবে রেমাল। এটি ওমানের দেয়া নাম। আরবি শব্দ, এর অর্থ বালু। তবে, এই নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারে এটার নামকরণ করা হয়েছে”।

যদিও আরেকজন আবহাওয়াবিদ মি. কালাম মনে করছেন, “ এখনই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া যাবে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপ নিম্নচাপ। অনেক সময় নিম্নচাপ হয়েও কোন কোন সিস্টেম শেষ হয়ে যায়। ফলে লঘুচাপ তৈরি হওয়ার আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া যাবে না ”।

“এখন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটা ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হয়েছে মাত্র। এটা শক্তিমাত্রা অর্জন করে লঘুচাপে পরিণত হবে। ফলে এটা এখনো সময় সাপেক্ষ। কারণ এখনো লঘুচাপ তৈরি হয় নি”।

“ এটা থেকে পরে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ পরবর্তীতে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ফলে এখনই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিবে কিনা তা বলা যাবে না। লঘুচাপ তৈরি হওয়ার পরে আরো তিনটি ধাপ পার হওয়ার পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় ” বলছেন মি. কালাম।

মি. কালাম বলেন,“ আগামীকালের মধ্যে লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। সেটি শক্তিমাত্রা অর্জন করে এখন যে অবস্থায় রয়েছে তাতে ২৬ তারিখের মধ্যে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে”।

“ ফলে নিম্নচাপ না হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হবে বা এর গতিপথ কোথায় হবে তা বলা যায় না। নিম্নচাপে পরিণত হলেই স্পষ্টভাবে লোকেশন বলা যায়। তাই এটা না হওয়া পর্যন্ত কোথায় যাবে কি যাবে না তা বলা যাবে না।”

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, নিম্ন ট্রপোস্ফেরিক স্তরে একটি সাইক্লোনের ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ -পশ্চিমে অবস্থান করছে।

এটি ২৪শে মে সকাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের কেন্দ্রীয় অংশে একটি নিম্নচাপে ঘনীভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যা উত্তর -পূর্ব দিকে চলতে থাকবে।

সমুদ্রের অবস্থা কেমন থাকবে সে সম্পর্কেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে এতে।

বলা হয়েছে, ২১ও ২২শে মে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ -পশ্চিমাংশে সমুদ্রের অবস্থা মাঝারি থেকে উত্তাল হতে পারে। ২৩ ও ২৪ শে মে থেকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থেকে উত্তপ্ত হতে পারে।

এতে জেলেদের সাগরে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক বার্তাও দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, জেলেদের ২৩ শে মে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এবং ২৪শে মে থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাছ ধরতে যারা সমুদ্রে রয়েছেন তাদের ২৩শে মের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

একইসাথে পরবর্তী পাঁচদিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

যেসব ধাপ পার হয়ে ঘূর্ণিঝড় হয়

ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় হতে হলে প্রথমে সাগরে লঘু চাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ যখন ১৭ কিলোমিটার থাকে এবং বায়ুর চাপ কম থাকে তখন একে লঘু চাপ বলা হয়।

বাতাসে যদি ঘুর্নন তৈরি হয়, অর্থাৎ ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে যায়। কারণ আশেপাশে থেকে জলীয় বাষ্প আসে। জলীয় বাষ্প আসলে বায়ুর চাপ কমে যায়।

এরপরের ধাপে রয়েছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ লঘুচাপ শক্তির মাত্রা অর্জন করে ৩১ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘন্টায় বাতাসের বেগ থাকলে একে সুস্পষ্ট লঘুচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়”

তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

মি. মল্লিক বলেন, “সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় নিম্নচাপ। এরপর নিম্নচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ”।

পরে এটা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে এই আবহাওয়াবিদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024