ইসমাইল শেখ
নিজেদের পর্যাপ্ত কর্মী, বিশেষ করে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরের পহেলা জুন থেকে ‘চান্সেনকার্টে’ বা ‘অপরচুনিটি কার্ড’ নামক একটি প্রকল্প চালু করেছে জার্মান সরকার। এই প্রকল্পের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য জার্মানিতে গিয়ে বৈধভাবে কাজ করাটা সহজতর হবে।
মূলত, দীর্ঘদিন ধরেই শ্রম সংকটে ভুগছে জার্মানি এবং এটি দেশটির উৎপাদনশীলতার ওপর চরম প্রভাব ফেলছে।
এখন, এই সংকট মোকাবিলা করতে নিজেদের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনছে জার্মানি। তারই প্রেক্ষাপটে ওই ‘অপরচুনিটি কার্ড’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এটি বিদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য জার্মান শ্রমবাজারে ঢোকা সহজ করে তুলবে।
জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলের (ডিডব্লিউ) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার বলেন, “জার্মানির অর্থনীতিতে বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রমী ও দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। তারা যোগ্য হলে আমাদের দেশে আসতে পারেন।”
এই নতুন উদ্যোগের অধীনে যোগ্য ব্যক্তিরা কোনও চুক্তিপত্র ছাড়াই এক বছরের জন্য জার্মানিতে থাকতে পারবেন এবং সেখানে থেকে চাকরি খুঁজতে পারবেন।
চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে দেশটিতে থাকার সময়, অপরচুনিটি কার্ডধারীরা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী খণ্ডকালীন চাকরির জন্য বিবেচিত হবেন এবং প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। এর বাইরে, তারা সেখানে নতুন চাকরি খুঁজে পেতে পরীক্ষামূলকভাবে দুই সপ্তাহ কাজ করতে পারবেন।
চান্সেনকার্টে (অপরচুনিটি কার্ড) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি হলো একটি রেসিডেন্স পারমিট বা আবাসিক অনুমতি, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর কর্মীদেরকে কাজ খোঁজার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার অনুমতি দিবে।
এই অপরচুনিটি কার্ড হলো একটি পয়েন্টভিত্তিক সিস্টেম, যা অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত গ্রিন কার্ডের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার নাগরিকদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেয় এই গ্রিন কার্ড।
আপনার যোগ্যতা, শিক্ষা ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আপনি অপরচুনিটি কার্ডের জন্য যোগ্য কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য পয়েন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।
একটি অপরচুনিটি কার্ড পাওয়ার জন্য আপনার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট থাকা প্রয়োজন।
তবে আপনার যদি জার্মানিতে স্বীকৃত, এমন কোনও পেশাগত যোগ্যতা থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে ন্যূনতম পয়েন্ট না থাকলেও একজন দক্ষ কর্মী হিসাবে অপরচুনিটি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
যদি আপনি একজন দক্ষ ব্যক্তি হন বা পয়েন্ট সিস্টেমের অধীনে অপরচুনিটি কার্ড পেতে চান, আপনাকে অবশ্যই কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে।
একটি অপরচুনিটি কার্ড পেতে হলে অবশ্যই আপনার দেশে স্বীকৃত, এমন কোনও ডিগ্রিধারী হতে হবে আপনাকে। অথবা, দেশে স্বীকৃত এমন কিছুর ওপর দুই বছরের প্রশিক্ষণ বা ট্রেইনিং সম্পন্ন করতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে, অথবা সাধারণ ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অফ রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজ (সিইএফআর) এর অধীনে বি-টু স্তরের দক্ষতা থাকতে হবে।
এছাড়াও, আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে জার্মানিতে চাকরি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সেখানকার খরচ মেটাতে তাদের যথেষ্ট আর্থিক সংস্থান রয়েছে।
একটি অপরচুনিটি কার্ড পাওয়ার জন্য আপনার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট থাকা প্রয়োজন।
সিএএসএস কনসালট্যান্ট ফার্মের সাথে জড়িত আদনান হুসাইন বিবিসি’র সাথে এই অপরচুনিটি কার্ড নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “এই কার্ডটি তরুণদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ। আগে তাদেরকে চাকরির জন্য স্পনসরশিপ পাওয়ার অপেক্ষা করতে হতো বা ভিজিট ভিসায় গিয়ে চাকরি খোঁজার চেষ্টা করতে হতো।”
“এখন কানাডার মতো আপনিও পয়েন্ট সিস্টেমের অধীনে কোনও স্পনসরশিপ ছাড়াই জার্মানিতে যেতে পারেন এবং সেখানে চাকরি খুঁজে পেতে পারেন।”
মি. হুসাইন বলেন, “সাধারণত, যারা জার্মানিতে যেতে চান, তাদেরকে জার্মান ভাষা শেখা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় এবং প্রায়ই সেটি অনেক মানুষের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”
কিন্তু আজকাল মানুষ এইসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রবল চেষ্টা করছে। গত ছয় মাস ধরে দূতাবাসে ভিড় লেগে আছে এবং লোকজন বলছে, “আমাদেরকে যেতে দাও।”
“এ কারণে জার্মান দূতাবাসও ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য তারিখ দীর্ঘায়িত করছে।”
বিবিসি
Leave a Reply