সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা, চিত্রাঙ্কন কর্মশালা, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন
নানা আয়োজনে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে পালন করা হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এসব কর্সূচির মধ্যে সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, চিত্রাঙ্কন কর্মশালা, বৃক্ষরোপন, গাছের চারা বিতরণ, তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, আলোচনা সভা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বুধবার, ৫ই জুন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং সাভারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক।
এ ছাড়া সাভারে তরুণদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলার কার্যক্রমে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্র্যাক; সেই দায়বদ্ধতা থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান : বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউডিপি) উদ্যোগে আয়োজিত এই পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিবন্ধন করেন। এ ছাড়া বুধবার সরাসরি নিবন্ধনের মাধ্যমেও অনেকে এতে অংশ নেন।
প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সন্ধ্যায় ছিল নাট্যদল ‘অনুস্বর’-এর পরিবেশনা। পরিচ্ছন্নতা অভিযানটি সুগন্ধা সৈকতে শুরু হয়। অংশগ্রহণকারীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে কলাতলী ও লাবনী সৈকত অভিমুখে যাত্রা করে সংগ্রহ করেন প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য। সৈকত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (PLEASE-প্লিজ)’ প্রকল্পের অংশ।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম তারিকুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন,“PLEASE-প্লিজ প্রকল্পের অধীনে ব্র্যাক অত্যন্ত কার্যকরভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এর পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ইতিবাচক ফল মিলবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।”
ব্র্যাক ইউডিপি-এর কর্মসূচি প্রধান মোঃ ইমামুল আজম শাহী বলেন, “প্লাস্টিক দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে পর্যটন ও সামুদ্র থেকে মাছ ধরার কার্যক্রম অন্যতম। এ ছাড়া যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিন দিন এই সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। আমাদের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।”
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে প্রতিদিন প্রায় ১২৪ থেকে ২০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যার উল্লেখযোগ্য অংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। PLEASE-প্লিজ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের গৃহস্থালি বর্জ্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের দূষণ উপকূলীয় এলাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীল সমুদ্র নির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
চিত্রাঙ্কন কর্মশালা, বৃক্ষরোপন, আলোচনা : সাভারে ছয়টি স্কুল এবং একটি কলেজের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী দিনব্যাপী নানা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সাভার সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে ছিল চিত্রাঙ্কন কর্মশালা, আলোচনা সভা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ। প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এই কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) এবং ব্র্যাক।
রেজিস্ট্রেশন ফি হিসাবে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে চিত্রাঙ্কন কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অংশগ্রহণকারীদের গল্প-কথা আর ছবির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপণার প্রয়োজনীয়তা, প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিরোধে করনীয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা পরিবেশ বিষয়ে ছবি আঁকেন।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেন শিল্পী জাফর ইকবাল। দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতির বক্তব্যে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী মো: আব্দুল গনি বলেন, “আমাদেনর সবারই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। কারণ, প্রতিটি গাছই আমাদের জন্য সুস্থ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।”
ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির
পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীর নেতৃত্বের মেধা ও মনন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলে আমরা তাদের নিজেদের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করছি।” আলোচনা সভা শেষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ এবং সামাজিক পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Leave a Reply