সারাক্ষণ ডেস্ক
নরেন্দ্র মোদি রবিবার তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন যা এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ধাক্কার পর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে জোট সরকারে তার নীতিগত নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা পরীক্ষা করবে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক অনুষ্ঠানে মোদিকে শপথ বাক্য পাঠ করান, যেখানে সাতটি আঞ্চলিক দেশের নেতা, বলিউড তারকা এবং শিল্পপতিসহ হাজার হাজার গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৯ জুন, ২০২৪-এ ভারতের নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন
মোদি শপথ গ্রহণের কয়েক মিনিট আগে “ভারতের সেবা করতে পেরে সম্মানিত,” এটি লিখে X-এ পোস্ট করেন। শপথের জন্যে সাদা কুর্তা এবং নীল হাফ জ্যাকেট পরিহিত ৭৩ বছর বয়সী নেতার নাম ডাকা হলে সমর্থকরা হর্ষধ্বনি, করতালি এবং “মোদি, মোদি” স্লোগান দিতে থাকেন।
মোদির পর আগের সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা শপথ নেন: রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নিতিন গাডকারি, নির্মলা সীতারামন, সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর এবং পীযূষ গোয়েলসহ অন্যরা। তাদের দপ্তর শপথ গ্রহণের পরে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি হলেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র মতাদর্শগত পিতৃসংস্থার প্রচারক হিসেবে শুরু করা নেতা যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা জওহরলাল নেহরুর পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদ সেবা করা দ্বিতীয় ব্যক্তি।
নরেন্দ্র মোদি রবিবার তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে নয়াদিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। ছবি: এএফপি
১ জুন শেষ হওয়া নির্বাচনে মোদি তাঁর বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)-এর ১৪টি আঞ্চলিক দলের সমর্থনে তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করেন । এটি আগের দুই মেয়াদের মতো নয় যখন তাঁর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল।
এই ফলাফলকে জনপ্রিয় নেতার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে কারণ সমীক্ষা এবং এক্সিট পোলগুলো ২০১৯ সালের চেয়েও বিজেপির আরও বেশি আসন পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
মোদি বিশ্বব্যাপী সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছেন এবং ভারতের বিশ্বব্যাপী মর্যাদা বাড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পর্যাপ্ত চাকরির অভাব, উচ্চ মূল্য, কম আয় এবং ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ভোটারদেরকে অনেকাংশেই তার বিপক্ষে নিয়ে গেছে ।
২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যখন মোদি পশ্চিমের রাজ্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন বিজেপি শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল যা তাঁকে অনায়াসেই শাসন করার সুযোগ দিয়েছিল।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর তিনটি নির্বাচনী জয়ের রেকর্ডের সাথে মিল রেখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদি আজ ইতিহাস তৈরি করেছেন।
সুতরাং, বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির নতুন মেয়াদ সম্ভবত চ্যালেঞ্জপূর্ণ হবে কারন বিতর্কিত রাজনৈতিক এবং নীতিগত বিষয়ে সর্বসম্মতি গঠন, আঞ্চলিক দলগুলির ভিন্ন স্বার্থ এবং একটি শক্তিশালী বিরোধীদলের মুখোমুখি হতে হবে।
কতিপয় বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিতে আর্থিক ভারসাম্যও চাপের মুখে পড়তে পারে। এনডিএ-র আঞ্চলিক অংশীদারদের শাসিত রাজ্যগুলোর জন্য উচ্চতর উন্নয়ন তহবিলের দাবি এবং এবছরের নির্বাচনে হারানো ভোটারদের পুনরায় আকর্ষণ করতে বিজেপির সম্ভাব্য কল্যাণমূলক ব্যয় বৃদ্ধির চাপের কারণে।
সিটি রিসার্চের চিফ ইকোনমিস্ট, ভারত, সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, “অবকাঠামো, উৎপাদন এবং প্রযুক্তি নির্মাণে ব্যাপক ফোকাস অব্যাহত থাকলেও, “বিতর্কিত সংস্কারগুলো বিলম্বিত হতে পারে।”
রিক রসো, ওয়াশিংটনে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে ইউ.এস-ইন্ডিয়া পলিসি স্টাডিজের চেয়ার যোগ করেন , “বিজেপির প্রধান জোট অংশীদাররা রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য থাকেননা , তাদের কাছে প্রত্যাশা খুবই দূর্বল । এরা কখনও বিজেপির সাথে কাজ করে আবার কখনও তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে।”
“তার জোটে যে বড় দলগুলো অংশ নিচ্ছে তারা প্রায়ই জাতীয় স্তরের বিষয়ে উদাসীন তাই অর্থনৈতিক সংস্কার বা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে নিরাপত্তামূলক সম্পর্কে অত্যন্ত সাবধানে এগোতে হবে” তিনি বলেন।
মোদি, যার নির্বাচনী প্রচারে ধর্মীয় বক্তব্য এবং ভারতের ২০০ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি কথিত পক্ষপাতের জন্য বিরোধীদলের সমালোচনা ছিল, চমকপ্রদ ফলাফলের পর এতে আরও ঐক্যবদ্ধ সুরের মূর্ছনা শোনা যাচ্ছে।
“আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছি… কিন্তু দেশ চালানোর জন্য সর্বসম্মতিই গুরুত্বপূর্ণ… আমরা সর্বসম্মতির জন্য প্রচেষ্টা চালাবো,” এনডিএ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে জোট প্রধান হিসেবে নাম ঘোষনার পর শুক্রবার তিনি একথা বলেন।
Leave a Reply