ওই একই সময়ে হাইতির নীলও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এর ফলে ইউরোপীয় নীলের বাজার থেকে বাংলার সব প্রতিদ্বন্দ্বি অপসারিত হয় একে একে। ১৮১০ সালের দিকে বাংলার নীল পৌঁছে যায় ইউরোপীয় বাজারে। ** বৃটিশ কর্তৃপক্ষ ১৮১০ সালের দিকে রিপোর্ট পড়ে বলা যেতে পারে ইউরোপের বাজারে বাংলার প্রধান পণ্য দ্রব্য এখন নীল। ইউরোপে নীলের চাহিদার প্রধান অংশ তখন মেটাতো বাংলাদেশ। আর প্রতিদ্বন্দ্বি তখন নেই।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিশ্বে নীলের বাজারে বৃটেনের একচেটিয়া ব্যবসা। বাংলার নীল তখন ইউরোপীয় বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বি। হাইতির নীল বিলীয়মান হবার পর ১৮০৫ সাল থেকে ১৮১৪ সালের মধ্যে গুয়াতেমালার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি নীল রফতানী করে বাংলাদেশ।
১৮২৪-২৫ সালে বাংলাদেশের গড় উৎপাদন ছিল ৪০ লক্ষ কেজি নীল। এই পরিমাণ নীলের সবই তখন রফতানী হত ইউরোপে। ইউরোপে তখন যত নীল মওজুদ ছিল তার তিন চতুর্থাংশ বঙ্গদেশের। ৪৭ এই মওজুদ নীলের তিন চতুর্থাংশ ব্যবহার করত নিজে বৃটেন, আর যে দুই তৃতীয়াংশ থাকল তা পুনঃরফতানী করা হত।
বাংলাদেশের সস্তা শ্রমিকের ধাক্কায় পড়ে গুয়াতেমালা আর উঠে দাঁড়াতেই পারল না প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাংলাদেশ নীল রফতানী করে এমন উদ্বৃত্ত মওজুদের উদ্ভব ঘটালো যে ইউরোপে নীলের দর পড়ে গেল। এদিকে আমেরিকা থেকে আসা নীলের উপর এমন বেশি হারে কর বসাল যে অন্য নীল ইউরোপের বাজারে ঢুকতেই পারল না। গুয়াতেমালা আর বিশ্ব বাজারে নীল বিক্রী করতে পারল না।
বিলুপ্ত হল গুয়াতেমালার নীল। স্পেন তখন এতই দুর্বল রাষ্ট্র যে তার শক্তি ছিল না পাল্লা দেয়ার। আমেরিকার উপনিবেশগুলো তারা হারাল। নীল উৎপাদনকারী উপনিবেশগুলোতেই দেখা দেয় আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম অঙ্কুর। এই পরিস্থিতি এ রকম অভিমতের জন্ম দেয় যে নীল চাষের বিলুক্তি “আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ”।” ফরাসীরা তাদের নীল উৎপাদনকারী উপনিবেশ হাইতি হারাবার পর এ ব্যাপারে আর কিছুই করতে পারল না।
Leave a Reply