শ্রমিক: ফ্যাক্টরি ও শিল্পোদ্যোক্তা
দারাক কি কারণে বাংলাদেশের নীল সম্পর্কে রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিলেন তা খতিয়ে দেখার আগে বাংলাদেশের নীল শিল্প সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া যাক। বঙ্গদেশের নীল শিল্প সম্প্রসারিত হয়েছিল দ্রুত গতিতে। ১৭৮০ সালে নীল শিল্পের উদ্যোক্তা ছিল মাত্র ক’জন, ১৮৩০ সালে নীলকরদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০তে। একজন শিল্প উদ্যোক্তা কয়েকটি নীলকুঠির মালিক হতে পারতেন।
১৮৩০ নাগাদ গড়ে প্রতি জন উদ্যোক্তা প্রায় ১০০০ হেক্টর নীলের জমির মালিক বনে যান। (এই হিসাবে বঙ্গদেশে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে নীল চাষ করা হত।) নীল শিল্পের উদ্যোক্তাদের বলা হত নীলকর। তখনকার এক হিসাবে দেখা যায় ৪০ লাখ কেজি নীল উৎপাদনের জন্য নীলকররা ১.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছিল। লাভের হার শতকরা ৪০% ভাগ। প্রায় সব নীলকর ছিল ইউরোপীয়। সিল্ক ও চিনির চেয়ে নীল ছিল তাদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে নীল উৎপাদন করা হত সে গাছের নাম “ইন্ডিগোফেরা টিংটোরিয়া”। ছোটো ঝোপের মত গাছ, পাতাও ছোটো ছোটো। বঙ্গদেশে প্রতি বছরে নতুন করে গাছ লাগাতে হত। কেননা, এই গাছগুলো লাগান হত গাঙ্গের বদ্বীপের বন্যাপ্লাবিত ছোটো ছোটো টুকরা জমিতে। গাছগুলো বন্যা প্লাবিত হত প্রতি বছরে। বন্যার পানিতে নীল গাছগুলো কিছুদিন ডুবে থাকলেই মরে যেত সেগুলি।
নতুন করে তাই নীল গাছ বুনতে হত প্রতিবছর। এসব কারণে উত্তর ভারত, হাইতি, ওয়েতমালা, বঙ্গদেশে নীল গাছ বপনের পদ্ধতি একেবারে আলাদা। ওই সব জায়গায় প্রতি বছর বদলাতে হত না বলে কয়েক বছর এক নাগাড়ে নীলচাষ করা হত যতদিন পর্যন্ত না গাছের ফলন কমে যেত। বঙ্গদেশের জমি ও আবাহওয়ায় অক্লেশে নীল জন্মালেও ভাল ধরনের নীল পেতে হলে গাছের যত্ন নিতে হত বেশ। বিশেষভাবে যত্নের সঙ্গে গাছের গোড়ায় নিড়ানি দেওয়া ছিল অতি জরুরী।
Leave a Reply