সারাক্ষণ ডেস্ক
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস এর রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে এই বছর একটি প্রত্যাশিত মন্দা সত্ত্বেও, বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবেই অবস্থান করবে।
শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি এই বছর ৬.৬% এ চলে আসবে, যা ২০২৩ সালের ৮.২ % থেকে নেমে যাওয়ার একটি পূর্বাভাস।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভারতের প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়াকে দ্রুততম বর্ধনশীল অঞ্চল হতে চালিত করছে।টানা তিন বছরের পতনের পর ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২.৬% এ স্থির থাকবে, যা “একটি ‘নরম অবতরণ’-এর জন্য চূড়ান্ত পন্থা বলে মনে হচ্ছে।” কিন্তু বিশ্বের অর্থনীতির সামগ্রিক ঝুঁকি নেতিবাচক দিকেই ঝুঁকছে।
পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল – যার মধ্যে রয়েছে চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, আসিয়ান দেশসমূহ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলি – এই বছর ৪.২% থেকে ৪%-এ নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। চায়নার প্রবৃদ্ধির হার ৫.২% থেকে নেমে ৪.৮%-এ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চায়নার চলমান সম্পদ খাতের মন্দা, দুর্বল খুচরা বিক্রয় এবং দুর্বল ব্যবসায়িক মনোভাব বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কারণ নীতির অনিশ্চয়তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগকারীদের সরে যেতে বাধ্য করে।
চায়নাতে প্রত্যাশিত মন্দার চেয়ে খারাপ একটি বৈশ্বিক পণ্য মূল্যের অস্থিরতায় ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি চায়নিজ শক্তি এবং অন্যান্য পণ্যের চাহিদা দুর্বল হয়। চায়নার সাথে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্কযুক্ত অর্থনীতিগুলি বিশেষভাবে দুর্বল হতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম যথাক্রমে ৫% এবং ৫.৫% বৃদ্ধির অনুমান সহ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতির মধ্যে উজ্জ্বল স্থান ধরে রাখবে। উন্নত অর্থনীতির মধ্যে, জাপানের মন্থর বৃদ্ধি, ধীরগতির রপ্তানি এবং একটি স্থিতিশীল পর্যটন খাত এর অর্থনীতি ২০২৪ সালে ০.৭% হারে বৃদ্ধি পাবে যা গত বছর ১.৯% ছিল।বিশ্বব্যাংক বলছে, যদিও স্থিতিশীল, মহামারীর আগের দশকে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি স্তরের নীচেই অবস্থান করছে, এবং বিশ্বব্যাপী মূল উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এটি “পর্যাপ্ত নয়”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, এলোমেলো বাণিজ্য রীতি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈশ্বিক ঋণদাতারা বলছে যে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য নীতি একটি ইস্যু হতে পারে যদি তিনি এই প্রতিযোগিতায় জিততে পারেন।
বিশ্বব্যাংকের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোস বলেন, “মার্কিন কোম্পানিগুলো চায়না থেকে অন্য দেশে কিছু কার্যক্রম স্থানান্তর করছে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর বাণিজ্য উত্তেজনার দ্রুত সমাধানের প্রত্যাশা কমে যাওয়ায় এই প্রবণতা ত্বরান্বিত হতে পারে।”
“সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা বাণিজ্যের ধরণ এবং বাণিজ্য প্রবাহে পরিবর্তন এনেছে।”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হবে স্ট্যান্ডআউট উন্নত অর্থনীতি, কারণ এটি ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির চেয়ে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা সহ ২.৫% বৃদ্ধিতে স্থির থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গতিশীলতা, প্রকৃতপক্ষে, আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির কিছু উল্টো সম্ভাবনা দেখবার একটি কারণ হতে পারে।”অন্যান্য ইতিবাচক প্রবণতাগুলির মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি যোগ হতে পারে — বর্তমানে এই বছরে গড় ৩.৫% দেখা যাচ্ছে যা প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত নেমে আসছে।
এতদ্বসত্ত্বেও, সুদের হার বিশ্বব্যাপী উচ্চ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ “আরও বেশি সময়ের জন্য” হারের পরিবেশ বিশ্বব্যাপী আর্থিক অবস্থাকে আঁটসাঁট করে রাখে, যা উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে আরো আঘাত করছে।
Leave a Reply