সারাক্ষণ ডেস্ক ও টেকনাফ থেকে জাফর আলম
হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিগুলো দখল করার পর আরাকান আর্মি মিয়ানমারের শহর শিলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী দখল নিতে একের পর এক হামলা করছে।
আজ শনিবার ভোর থেকেই টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত পয়েন্টের ওপারে এ মর্টার শেলের ও গুলির শব্দ শোনা যায়।
উনছিপ্রাং এলাকায় বাসিন্দারা বলেন, চিংড়ি ঘের সাতদিন্না থেকে মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর দূরত্ব ৪শ মিটার। ও এই শহরে কী হয় তা খালি চোখে অনেকটা দেখা যায়। শনিবার সকাল থেকে কুমিরখালীর ঘাঁটি দখল নিতে আরাকান আর্মি যে হামলা করছে তার মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে ও আগুনের ফুলকিও দেখা যায়।
বোমা যখন বিস্ফোরণ হয় তখন বাংলাদেশেভূমিকম্পের মতো অনুভূত হয়। এখানো চলমান আছে।
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার আর্মি ও আকারান আর্মির এই এই যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষেয়ে প্রশ্ন করলে সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশও শক্তভাবেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছে । বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা সঠিকভাবেই চলছে বলে আমি মনে করি।
মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির ১১৩ সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে | তার মধ্যে জান্তা-বিদ্রোহী সংঘাতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান আরো বলেন, এমনিতেই আর রোহিঙ্গা নেবার প্রশ্নই আসে না। কারণ এতে অর্থনৈতিকভাবে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশে। মিয়ানমারের অভ্যান্তরে কি পরিস্থিতি তা সার্বিকভাবে আমরা কেউ জানি না। মিয়ানমারে তাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে এ ব্যাপরে উদ্বিগ্ন । আর এ উদ্বেগের সব থেকে বড় কারণ, এর আগেও অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে যা আমাদের জন্য একটা বড় চাপের বিষয়।
শনিবারে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া ৪টি গুলি এপারে একটি দোকান ও বাড়িতে এসে পড়েছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি হোয়াইক্যং সীমান্তবর্তী ঘর-বাড়িতেও এসে পড়ছে। একদিকে সীমান্ত অতিক্রমের অপেক্ষায় রোহিঙ্গাদের ঢল ।
কক্সবাজারের টেকনাফ হোয়াইক্যং উনছিপ্রাং সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের গোলাগুলি আর মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকটশব্দ থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে বিরাজ করছে।
উনছিপ্রাং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রশিদ আহমদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি আর মর্টার শেলবিস্ফোরণের বিকট শব্দ এখনো ভেসে আসছে। সীমান্তের কাছাকাছি যারা চিংড়ি চাষিদের নিরাপদ স্থানে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, সকাল থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরেচলা গৃহযুদ্ধের গুলাগুলির বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। হয়তো উনছিপ্রাং সীমান্তের কাছাকাছিমিয়ানমারের শহর কুমিরখালী দখল নিতে এই হামলা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত গুলাগুলি হয়েছিল। দিনে কিছুটা শান্ত ছিল। শনিবার সকাল থেকে নতুন করেআবারো গুলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটিরসীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ৩ শতাধিক সদস্যবাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এবংআহতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতেরবিল সীমান্ত এলাকা থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে মরদেহটির পরিচয়পাওয়া যায়নি।
আজ শনিবার দুপুরের দিকে রহমতেরবিল সীমান্ত থেকে মরদেহটি বিজিবির সহায়তায় উদ্ধার করে পুলিশ।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। তিনি বলেন, রহমতেরবিল সীমান্তথেকে একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটির নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিচয় সনাক্তকরণে কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারী) রাতের দিকে রহমতেরবিল সীমান্ত এলাকায় মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরে বিজিবি পুলিশকেখবর দেয়। পরদিন মরদেহটি উদ্ধার করতে গেলে ওপার থেকে গোলাগুলি হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে ফিরে আসে পুলিশ।
Leave a Reply