সারাক্ষণ ডেস্ক
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)। সংগঠনটি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবার এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও তাঁর পরিবারের সম্পদ নিয়ে সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করার পর গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন বেনজীর।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর মিলনায়তনে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক সভা হয়। এতে কেউ কেউ এ ধরনের খবর প্রকাশে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলেন। সভার পরদিন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তি এল।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল সই করে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো কোনো গণমাধ্যম ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করছে, যা সাংবাদিকতার নীতিমালার বিরোধী। এমতাবস্থায়, কী কারণে, কার উদ্দেশ্য হাসিল এবং কার নির্দেশ (ম্যানডেট) বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনায় লিপ্ত-সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা অযৌক্তিক নয়।
পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্য সহনশীলতা) নীতি অনুসরণ করে আসছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয় না। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে বরাবরই স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে কোনো খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ প্রকাশের তারা প্রতিবাদ করতে চান। গণমাধ্যমে কোনো ঘটনার সামগ্রিক চিত্র উঠে আসুক, সত্য উন্মোচিত হোক। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন হোক সত্যাশ্রয়ী ও বস্তুনিষ্ঠ।
নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশে পাঠকের কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, কোনো এক রহস্যময় কারণে এক শ্রেণির গণমাধ্যম অতি সুকৌশলে পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে, যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর বলে পরিগণিত হয়। গণমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়, যা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এ ধরনের অপপ্রচার সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা এবং দেশবিরোধী চক্রান্তের অপকৌশল কি না, তা বিবেচনার দাবি রাখে। ফলে, পুলিশি সেবা প্রত্যাশী মানুষ, তথা দেশ ও জাতি সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পুলিশ কখনোই গণমাধ্যমের কাছে এ ধরনের অপেশাদারি সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পুলিশের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা, করোনাকালে পুলিশের কার্যক্রম ইত্যাদি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, পুলিশ শত বছরের পুরোনো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। সেই থেকে শুরু, অদ্যাবধি বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার সদস্যরা যেকোনো সংকট ও প্রয়োজনে দেশ এবং জনগণের কল্যাণে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতেও কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, এক সময় উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের নগ্ন থাবায় দেশবাসী চরম উৎকণ্ঠিত ছিলেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ছিল চরমপন্থী সন্ত্রাসের জনপদ। বাংলাদেশ পুলিশ এই জনপদকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রভাবে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পুলিশ দেশবাসীর সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে। উগ্র সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত।
পুলিশ শুধু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়; যেকোনো মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে কখনো পিছপা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, করোনা মহামারীকালে বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে, জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে মানবিক পুলিশ হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ করোনাকালে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন), লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে, মানুষের বাসায় ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দিয়েছে। মানবতার চরম বিপর্যয়ের সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন লাশ ফেলে প্রিয়জনেরা চলে গেছেন, তখন লাশের দাফন/সৎকারের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। করোনাকালে জনগণের সেবায় ১০৯ জন পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তবুও পুলিশ সদস্যরা জনগণকে সেবা দেওয়া থেকে পিছপা হননি, তারা নিজের দায়িত্ববোধে ছিলেন অবিচল।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী চক্র কর্তৃক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, যেমন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও পেট্রল বোমাবাজদের প্রতিহত করার ক্ষেত্রে পুলিশের সফলতার কারণে উক্ত গোষ্ঠী পুলিশ বাহিনীকে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় প্রতিনিয়তই নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত। স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী চক্র তাঁদের দোসর বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীরা ধারাবাহিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত। তাঁদেরই অনুকরণে ইদানীং কোনো কোনো গণমাধ্যমে পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সদস্য সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের প্রতিবেদনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই বলেও বলা হয় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, তথ্যসূত্রবিহীন বাস্তবতা বিবর্জিত অতি কথিত এ ধরনের প্রতিবেদন পেশাদার সদস্যদের মনোবল ক্ষুণ্নের পাশাপাশি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীদের অনুপ্রেরণায় পুলিশের পেশাদার ভূমিকাকে জনসমক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করে পুলিশকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য কতিপয় গণমাধ্যম অত্যন্ত সচেতনভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এক ধরনের কুৎসিত প্রচার যজ্ঞে শামিল হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে রাশিয়া এমনি ইঙ্গিত দিয়েছেন ভিয়েতনাম সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ উত্তর কোরিয়া সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের এক দিন পর ভিয়েতনামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুতিন অস্ত্র সরবরাহের ইঙ্গিত দেন। খবর আলজাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সহায়তার জবাব হিসেবে মস্কো এই উদ্যোগ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি অব্যাহত রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককেও উদ্বেগের সঙ্গে দেখে পশ্চিমারা।
এ মাসের শুরুতে পশ্চিমাদের যারা প্রতিপক্ষ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পুতিন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে উচ্চমাত্রার নির্ভুল অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে সেসব অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। পুতিন তাই পাল্টা ব্যবস্থার হুমকি দেন তখন।
পুতিন বলেন, রাশিয়া অস্ত্র দেওয়ার জন্য পশ্চিমাদের যেসব প্রতিপক্ষের কথা বলেছিল, তার মধ্যে থাকতে পারে উত্তর কোরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, পিয়ংইয়ংসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ করার অধিকার রাখি আমরা। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তিগুলোও বিবেচনায় আছে।’
গত বুধবার পুতিন ও কিমের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে নিজেদের সামরিক সহযোগিতা আরও গভীরে নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের কোনোটি শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে একে অপরকে সাহায্য করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুতিন বলেছিলেন, মস্কো আশা করে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা পশ্চিমের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ব্যবহার করার দরকার নেই।
গত ২৪ বছরের মধ্যে এটিই ছিল পুতিনের প্রথম উত্তর কোরিয়া সফর। এই সফরেই কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি বলেন, ‘আজ স্বাক্ষরিত ব্যাপক অংশীদারত্বমূলক চুক্তিতে দুই পক্ষের (মস্কো-পিয়ংইয়ং) বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে।’
পুতিনের এই সফরে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার কয়েক দশকের সম্পর্ক পুনর্নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। কেননা, উভয় দেশই আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে রয়েছে। তাদের ওপর সিউল ও ওয়াশিংটন নজরদারি চালাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হতে ২০০৭ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এ নেটওয়ার্কের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর মধ্যে সহজেই পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। রেল নেটওয়ার্কটিতে যোগ দিতে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দেশের বিদ্যমান রেল অবকাঠামোও শক্তিশালী করার। যদিও মিয়ানমারের সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে কোনো রেল সংযোগ তৈরির সম্ভাবনা না থাকায় উদ্যোগটি এখন শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের স্থল সীমানার সিংহভাগই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে। কিছু সীমান্ত মিয়ানমারের সঙ্গেও রয়েছে। ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত হতে দোহাজারী থেকে সীমান্ত সংলগ্ন ঘুনধুম পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেও পরে প্রকল্পটি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় চীন, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে গড়ে তোলা অবকাঠামোর সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে শুধু ভারতের সঙ্গে সংযোগ করিডোর স্থাপনে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগে সচল আটটি রুট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চালু হয় দর্শনা-গেদে রুট। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরো চারটি বন্ধ রুট সচল হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি রুট সচল করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে নতুন করে আরো দুটি রুট তৈরির উদ্যোগ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রেল ট্রানজিট সুবিধা পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের দর্শনা-ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে হলদিবাড়ী হয়ে ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা করতে চায় দেশটি। বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ থেকে শুরু হওয়া দুইদিনের ভারত সফরে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবে বাংলাদেশের কাছে মূলত ট্রানজিট সুবিধা চেয়েছে ভারত। এ-সংক্রান্ত কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে বাংলাদেশ যেন মুনাফার ন্যায্য ভাগ পায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। অন্যদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রানজিট নয়, এমওইউর মূল বিষয়বস্তু হলো আন্তঃদেশীয় কানেক্টিভিটি বা সংযোগ। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যই এমওইউ সই করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গেদে (ভারত)-দর্শনা (বাংলাদেশ)-ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-চিলাহাটি-হলদিবাড়ী (ভারত)-ডালগাঁও (ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশন) পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন চালানোর জন্য ভারতীয় দূতাবাস থেকে আমাদের একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছিলাম। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে পরে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করে। সভায় সবার মতামত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি এ অবস্থায় রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে একটি এমওইউ সই হবে বলে আমি শুনেছি। সমঝোতার মূল বিষয়বস্তু কানেক্টিভিটি। ভারত-বাংলাদেশ-ভুটান, নেপাল—তাদের নিয়ে কীভাবে একটা কানেক্টিভিটি করা যায়, সে ব্যাপারে একটা এমওইউ সই হতে পারে। এ এমওইউ স্বাক্ষরের পর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের বিষয়ে বাকি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কীভাবে রুটটি কার্যকর হবে সেই রূপরেখাও তৈরি করা হবে।’
ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে দেশটির পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় যাতায়াতে রেলপথের দূরত্ব কমে আসবে। ট্রেনের পরিচালন ব্যয়ও কমে আসবে দেশটির। প্রস্তাবিত রুটটি চালু হলে ভারত যতটা লাভবান হবে, আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী লাভের ভাগ বাংলাদেশেরও পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় ইউএন-এসকাপ (এশিয়া ও প্যাসিফিকের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন) থেকে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের একটা প্রাক্কলন করে রাখা আছে। অর্থাৎ ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, তা প্রাক্কলন করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে রেলপথ নির্মাণ হয়েছে জনগণের টাকায়। জনগণের টাকা দিয়েই এসব রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিবেশী কোনো দেশ যদি এসব রেলপথের উপকারভোগী হতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই এজন্য উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওরা (ভারত) করিডোর বলুক, আর যা-ই বলুক, ওদের দূরত্ব কিন্তু অনেক কমে যাবে। সময় ও খরচ বাঁচবে। তাই আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশের হিস্যাটা পাওয়া উচিত। এখন যদি এটার নাম আলাদা দেয়, তাহলে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-ট্রানজিটের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, আমাদের মুনাফার ভাগ কম। বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না। এমন অবস্থায় রেল নিয়ে কোনো চুক্তির আগে আমাদের একটা উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করা উচিত।’
অন্যদিকে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে যেকোনো কানেক্টিভিটি চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বাগত জানানো উচিত বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মোটা দাগে যদি বলতে হয়, তাহলে আমি বলব আমরা কানেক্টিভিটি পছন্দ করি। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ বাড়লে আমাদের উৎপাদনশীলতাও নিঃসন্দেহে বাড়বে। দুই দেশের পারস্পরিক আগ্রহ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকলে যেকোনো কানেক্টিভিটিকেই আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের কানেক্টিভিটির প্রস্তাবটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাই এককভাবে এ প্রস্তাবটি নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য আমার করা ঠিক হবে না।’
রেলওয়ের তথ্য বলছে, ব্রিটিশ আমলে বর্তমানের ভারত-বাংলাদেশের আটটি ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টগুলো হলো দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রোহনপুর-সিংহাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, শাহবাজপুর-মহিষাসন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী, বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা ও মোগলহাট-গিতালদহ। এসব ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে চলত ১০টি ট্রেন। ট্রেনগুলো হলো দার্জিলিং মেইল, সুরমা মেইল, আসাম মেইল, নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস, বরিশাল এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল (ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস), কাটিহার প্যাসেঞ্জার, আমনুরা প্যাসেঞ্জার ও জয়ন্তী প্যাসেঞ্জার।
ভারত ও পাকিস্তান পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরও ট্রেনগুলোর চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানে পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালুর পর ট্রেনগুলোর চলাচল ক্রমেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। পরের পাঁচ দশকে (১৯৫২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে) বন্ধ হয়ে যায় ভারত-বাংলাদেশের সবক’টি রেলওয়ে ইন্টারচেঞ্জ। ২০০৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পুনরায় চালু হয় দর্শনা-গেদে ইন্টারচেঞ্জ। যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম আন্তঃদেশীয় ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস। এ রুটে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেনও পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া আরো চারটি ইন্টারচেঞ্জ চালু হয়। এর মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে বর্তমানে খুলনা-কলকাতায় চলাচল করছে বন্ধন এক্সপ্রেস। ট্রেন চলাচল করছে রোহনপুর-সিংহাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ইন্টারচেঞ্জ দিয়েও।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া অবশিষ্ট ইন্টারচেঞ্জগুলো চালুর জন্য দুই দেশই এখন চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার দুপুর ২টা ৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করে।
বিমানটির ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় নয়াদিল্লির পালাম বিমান বন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান বিমান বন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
Leave a Reply