শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-২৯)

  • Update Time : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪, ৩.৩০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

পায়ে পায়ে ধুলো উড়ছে, দিগ্বিদিক ঝাপসা, অবলুপ্ত; চতুর্দিকে বোমার মতো ফেটে পড়ছে শ্লোগান।

এতক্ষণ পর হুঁশ হয় খোকার, বাড়ি থেকে বের হবার পর পরই মিছিলের স্রোত ব’য়ে যেতে দেখেছিলো সে.. গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলো তখনই।

খোকা ছোটা শুরু করে।

প্রতিটি রাজপথই এখন ভয়ানকভাবে পদপিষ্ট। মুহুর্মুহু বজ-নির্ঘোষে উপর্যুপরি কেঁপে উঠছে সবকিছু কাছেপিঠে কোথাও কোনো এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি শতবর্ষ পর রুদ্ররোধে উদ্গিরিত হচ্ছে, ভঘাচ্ছাদনে মুড়ে দিয়েছে চিৎপাত শহরকে; সংহারপিপাসু উত্তুঙ্গ অগ্নিময় লাভাস্রোত ধীর অথচ অপ্রতিরোধ্য গতিতে অগ্রসরমান।

মানুষের ভিড় কেটে বেরুতে পারছে না খোকা। বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। আসন্ন ত্রাস তাড়া করছে তাকে; মুহূর্তের সামান্য ব্যবধানে একটা আবশ্যিক প্রতিক্রিয়ায় সবকিছু হুড়মুড় ক’রে ভেঙে পড়বে, ভেঙে পড়বে বিচারালয়, ভেঙে পড়বে মিলনায়তন, ভেঙে পড়বে পানশালা, স্টেডিয়াম। এতদিন তার চোখে যা ছিলো সামান্য মানুষ, এখন তা সংগঠিত অবিচ্ছিন্ন মিছিলে। খোকা শিউরে উঠলো, এতদিন তার কাছে যা ছিলো দয়িতা যামিনী মদিরার মতো তিন অক্ষরের হাল্কা পালকে মোড়া পাখির মতো নিছক একটি রোগা শব্দ, এখন তা প্রচন্ড বিস্ফো- রণে ছড়িয়ে পড়েছে শহরময়, জনতা।
পিঠেপিঠি কয়েকটা দিন এইভাবে কাটলো। ঘর থেকে বের হয়নি খোকা। সম্বল বলতে কেবলমাত্র খবরের কাগজ, অথচ এ জিনিশটা দু’চোখে দেখতে পারে না সে, দারুণ বিতৃষ্ণা। সাধারণত সে কাগজ পড়ে না, কিন্তু কিছুদিন যাবৎ তাকে পড়তে হচ্ছে।

এ কয়দিনের ভিতর সবকিছু বেজায় রকমের বদলে গিয়েছে। কাগজ হাতে নিলে মনে হয় সদ্য অস্ত্র কারখানা থেকে বারুদ মেখে এসেছে। ছিটেফোঁটা দুর্ঘটনার খবর আসছে যখন-তখন। পরস্পর-বিরোধী রাজ্যির যত উড়ো খবরে বাজার সরগরম। কলকারখানা, ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছু অচল; দিনরাত ঘোঁট পাকাচ্ছে মানুষজন।

মোড়ে মোড়ে জটলা, প্রায় সর্বক্ষণ প্রতিটি রাস্তাতেই বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিটি ময়দানেই জনসভা। সর্বত্র একই কানাকানি, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার উদ্দেশ্য কি, নাকি আসলে সবটাই আগাগোড়া একটা ধাপ্পা; আবার সেই বুটজুতো আর রাইফেলের বাঁটের গুতো!

ক্ষেপে উঠেছে মানুষজন; একটু স্বতন্ত্র এবারের এই ক্ষ্যাপামির চরিত্র। আয়ত্তের বাইরেও চ’লে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। বজ্র আঁটুনি ফক্কা গেরো হবে এবার, এইসবে বিশ্বাসী অতি সাধারণ মানুষও। অবাঙালী পুঁজিপতিরা বস্তা বস্তা টাকা পাচার ক’রে ফেলছে, রুই- কাতলারা ভাগছে, গা-ঢাকা দিয়েছে অনেকেই, একটা কালো পরিণতি ধীরে ধীরে তার ক্ষেত্র তৈরি করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024