মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
সাত-সকালে ময়নার বাবা এসে এক ঝঞ্ঝাট বাধালো। সে ডাম ফ্যাক্টরির শ্রমিক, রায়পুরের লোক। এখন আর ঢাকা শহর নাকি মোটেই নিরাপদ নয়, ময়নাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে চায়।
খোকা বিরক্ত হ’য়ে বললে, ‘আমাদের ফেলে বাছাই ক’রে তোমার মেয়েকে কেউ মারতে আসবে না।’
লোকটা নাছোড়বান্দা ধরনের। বললে, ‘আপনাদের আবার কিসের ভয়া আপনাদের কেউ মারতে আসবে না। চিরকাল যত গজব সব আমাদের মতো ফুটোকপালে গরিব-দুঃখীদের উপরই; গায়েও আঁচড় লাগবে না আপনাদের-‘ খোকা পষ্টাপষ্টি বলেই ফেললে শেষ পর্যন্ত, ‘ও চ’লে গেলে অসুবিধে হবে আমাদের।’
ময়নার বাবা বললে, ‘লোকে যা বলাবলি করছে তাতে শহরে থাকা চলে না। পারলে কিছুদিনের জন্যে আপনারাও একদিকে চ’লে যান। আল্লা করুক, জয়বাংলা যদি হ’য়েই যায় তাহলে আর মেয়েটাকে ঝিগিরি করায় কে!’
খোকার মেজাজ খিচড়ে উঠলো এইসব কথায়। বুঝলো কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না, খামোকা, পাগল ক্ষেপেছে; ময়নার বাবার এমন একরোখা চেহারা এর আগে আর কখনো চোখে পড়েনি তার। ভিতরে ভিতরে একটা কিছু ওকে নাড়া দিচ্ছে, খোকা বুঝতে পারে, ফলে বিশ্বাসে যত না জ্বলজ্বলে তার চেয়ে বেশি উদ্ধত এখন লোকটা, ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো।
‘কি রে ময়না যাবি নাকি?’ ভিতরে গিয়ে সে জিগ্যেশ করলো ময়নাকে। বললে, ‘যাবি তো যা, সৎমায়ের কাছে আগের মতো আরামেই থাকবি!’
ময়না বললে, ‘আগেই ব’লে দিয়েছি, যাব না আমি’
‘তোর মর্জি’
ময়না বললে, ‘আমার জন্যে অত ভাবতে হবে না, ব’লে দিন।’
‘তাহলে যা, বিদায় ক’রে আয়-‘
ময়নাকে গররাজি দেখে গালাগাল শুরু করলো লোকটা। বললে, ‘বেয়াদব মেয়ে কোথাকার? চুল ধ’রে হিড় হিড় ক’রে টেনে বার করবো এখান থেকে। বড়লোকের বাড়িতে ফ্যানের বাতাস খেয়ে খেয়ে মুটিয়ে যাওয়া দেখাচ্ছি তোকে, এইবেলা গোছগাছ ক’রে নে, নইলে মেরে তক্তা বানাবো?’
Leave a Reply