অনুবাদ : ফওজুল করিম
ফরাসী সরকার যখন উপনিবেশে নীল চাষের চিন্তা ভাবনা করছেন তখন আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়েই আমি এসব তথ্য পেশ করছি: দারাক বাংলার নীলচাষের সঙ্গে উত্তর ভারতের নীল চাষের তুলনা করেছেন। এ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা আমি এই কারণে দিচ্ছি যে উত্তর ভারতেও বন্যা হয় না এবং সেই কারণে কিছু কিন্তু উপনিবেশ যেখানে বন্যা হয় না সেখানে সম্ভবতঃ এই ব্যবস্থা চালু করার বিবেচনা করা যেতে পারে। নীল চাষ সবখানে একইভাবে করা যাবে না কেননা প্রতিটি দেশ অন্য দেশের চেয়ে আলাদা বা স্বতন্ত্র।
উত্তর ভারতে নীলচাষের ব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। উত্তর ভারতের নীলচাষ কুয়ার জলসেচের উপর নির্ভরশীল। উপরন্তু একই নীলগাছ তারা একবারের জায়গায় ব্যবহার করে তিন বার। দারাকের মতে আফ্রিকার ফরাসী উপনিবেশের জন্য বাংলাদেশের চাইতে উত্তর ভারতের (হিন্দুস্তান) কৃষি ব্যবস্থাই হবে উপযোগী কেননা তা বন্যা প্লাবিত সমভূমি নয়। উৎপাদন ব্যয় প্রায় সমান আর নীল গাছের উৎকৃষ্টতাও প্রায় এক। কিন্তু নীলগাছ থেকে নীল প্রক্রিয়াজাত করার সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পদ্ধতি উত্তর ভারতের পদ্ধতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
“নীল প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা একশো বছর আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি। এইজন্য বাংলাদেশের নীলের চাইতে হিন্দুস্তানের নীলের দাম অর্ধেক। অনেক সময় হিন্দুস্তানের নীল বাজারে পরে থাকে অবিক্রীত।”
রিপোর্টের শেষাংশে ফরাসী কর্তৃপক্ষের কাছে দারাক কয়েকটি সুপারিশ করেন। প্রথমতঃ বাংলাদেশের মডেল হুবহু তিনি নকল করার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। যে পদ্ধতিতে নীলচাষ করা হয় বাংলাদেশের জন্য তা কার্যকরী ও উপযোগী। সেনেগালের জন্য তা উপযোগী হবে কিনা এই হল প্রশ্ন? পৃথিবীর অন্য গোলার্দ্ধে যে একই ব্যবস্থা চলবে সে সম্পর্কে সংশয়ের অবকাশ আছে। কেননা সেখানে ভূমির গঠন ও প্রকৃতি, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও ঋতুবৈচিত্র বাংলাদেশের চেয়ে একেবারে আলাদা।
অন্য জায়গায় পরিস্থিতি যে একরকম হবে এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই। তবুও যদি হুবহু একই রকম হয় সে হবে একটি ব্যতিক্রমি মিল।
Leave a Reply