রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

কিভাবে ঢাকাই মসলিন বোনা হতো ( পর্ব-৯)

  • Update Time : শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১.০৫ পিএম

শিবলী আহম্মেদ সুজন

 সুতা সুবিন্যস্ত করা রিফু করা

কাপড় ধোওয়া হলে তাকে সুবিন্যস্ত করার পালা। ধোওয়ার পরে অনেক সময় দেখা যেত যে মসলিনের সুতা অবিন্যস্ত হয়ে গেছে। যারা সুতাগুলি সুবিন্যস্ত করত তাদের নূরদিয়া [বা নারদিয়া] বলা হত। একটা নারদে কাপড় ভাঁজ করে নিয়ে তাকে দুটা খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হত।

একজন নারদিয়া কাপড়খানার ভাঁজ খুলে দাঁড়াত এবং অন্যজন কাপড়ের অবিন্যস্ত এলাকায় পানি ছিটিয়ে দিয়ে চিরুণীর ন্যায় একখানা কাঠের ফলকের সাহায্যে আস্তে আস্তে আঁচড়িয়ে সুতা সুবিন্যস্ত করে দিত। কিন্তু যদি ধোওয়ার সময় সুতা নষ্ট হয়ে যেত তাহলে রিফুকাররা তা নিখুঁতভাবে রিফু করে দিত। ঢাকার রিফুকাররা অত্যন্ত দক্ষ ছিল।

যেমন টেলর বলেছেন যে, একটি মসলিনের একটা সুতা সম্পূর্ণ বের করে নিয়ে রিফুকাররা একটি নূতন সুতা এমন নিখুঁত ভাবে ভরে দিতে পারত যে অতি বিচক্ষণ বিশেষজ্ঞও তা ধরতে পারতনা। সাধারণতঃ ধোপের পর যদি দেখা যেত যে, মসলিনে কোন একটি মোটা সুতা ব্যবহৃত হয়েছে তাহলেই রিফুকাররা মোটা সুতা বদলে সূক্ষ্ম সুতা ভরে দিত।

রিফুকাররা সাধারণতঃ আফিম সেবন করত এবং টেলরের মতে আফিমের নেশা থাকা অবস্থায় তারা রিফু কাজ অধিকতর দক্ষতার সাথে সমাধা করতে পারত। রিফুকাররা শ্রেণীগত ভাঁবে বসবাস করত এবং তাদের শ্রেণীগত লোকদের ছাড়া আর কাউকে রিফুর কাজ শেখাতনা।

আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা শহরে প্রায় ১৫০টি রিফুকার পরিবার বসবাস করত এবং নিজেদের ব্যবসা চালত। রিফুকাররা সবাই মুসলমান ছিল। ধোওয়ার সময় কাপড়ে কোন দাগ লাগলে ধোপারা তা মুছে দিত। তারা আমরুলের রসের সাহায্যে লোহার দাগ মুছত এবং ঘি, লেবুর রস, ক্ষার ইত্যাদি

মিশ্রিত রস দিয়ে নীল ও কচু ইত্যাদির দাগ মুছত। কুণ্ডুগার নামক একদল লোক মসলিন মোলায়েম করার কাজে নিযুক্ত থাকত। মসলিনকে শঙ্খ দিয়ে পিটে মোলায়েম করা হত। ‘আর মোটা কাপড় মোলায়েম করার জন্য ছোট ছোট মুগুর ব্যবহার করা হত। মসলিন মোলায়েম করার সময় মাঝে মাঝে চালের পানি ছিটান হত।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবদুল করিম-এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

কিভাবে ঢাকাই মসলিন বোনা হতো ( পর্ব-৮)

কিভাবে ঢাকাই মসলিন বোনা হতো ( পর্ব-৮)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024