রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

পৃথিবীর কমসংখ্যক মানুষ যে ধর্ম পালন করে

  • Update Time : শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১.৩৯ পিএম
পার্সি সম্প্রদায়ের একটি শিশুকে প্রথম ধর্ম দীক্ষা গ্রহণের দিনের অনুষ্ঠানে নানা আচার শেখানো হচ্ছে।

ব্লুমিংটনে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ইউরেশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর জামসিদ চোকসি বলেন, জরাথ্রুস্টার বাণী এককথায় আব্রাহামিক বিশ্বাসের বুকেন্ডস তৈরী করেছে। “আপনি ঠিক ভালো এবং খারাপের পার্থক্য দিয়ে শুরু করলেন যেখানে মানুষের কিছু করার আছে । যেখানে আমরা জীবনের ভিতরে দিয়ে যাইনা কিন্তু ভাবি, সবকিছুই ভালোতে শেষ হবে এবং খারাপ পরাজিত হবে।”

কঠিন বিশুদ্ধতার আইন বাইরের মানুষকে ইরানশাহ টেমপল কমপ্লেক্স সহ উদভারার অন্যান্য ছোট ছোট  অগ্নি মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেয়। আরিয়ার দীক্ষার দিন সকাল বেলা, জারিন ভার্দা আরিয়ার বয়সেরই তার কন্যাকে তার সাইড কারে বসিয়ে আরেকটি অগ্নি মন্দিরে রওয়ানা দিলেন। সাদা কাপড় পরিহিত ভার্দা, আমার ঘামানো হাতের সাথে নরম হ্যান্ডশেক সেরে হাসি দিয়ে বিদায় নিলেন। তিনি বললেন, আমি যদি আপনার সাথে হাত মেলাই তাহলে মন্দিরে প্রবেশের পূর্বে আমাকে আবার মাথা পর্যন্ত ধৌত করতে করতে হবে। সাদা কাপড়ে মোড়ানো মাথার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে একথা জানালেন মিস ভার্দা। কানাডায় একটি জরাস্ট্রিয়ান পরিবারের সদস্য যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এখন নারী কল্যাণের একজন কোচ।কারন তিনি ইরানশাহ মন্দিরের একজন পুরোহিতের স্ত্রী যাকে সবচেয়ে কঠিনতর নিয়ম মেনে চলতে হয়। পিরিয়ড চলাকালীন তিনি তার বাড়ি ছেঢ়ে শহরের অন্যকোন বাড়িতে গিয়ে উঠেন এবং সম্পূর্ণ আলাদা পোশাক ব্যবহার করেন ও খাবার গ্রহণ করেন। অনেক সাদা পোশাক পরিহিত উপাসক মন্দিরে আসেন এবং তকন ভার্দার মেয়ে  অধৈর্য  সহকারে টানাটানি করেন তার মায়ের কামিজের হাতা ধরে এবং বলতেথাকেন যে এখন ভিতরে যাওয়ার সময় হয়েছে।

মুম্বাইয়ে ডুংগারওয়াদি বন , এটি ১৬৭০ সালের দিকে স্থাপন করা হয়েছিল যেখানে পার্সিয়ান মৃত ব্যক্তিদের দেহ রাখা হতো।

ইন্ডিয়ার জরোয়াস্ট্রিয়ানস

ইন্ডিয়ার জরোয়াস্ট্রিয়ানস মানেই হলো পার্সিস যারা এই ধর্মের আসল জিম্মাদার।ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান মানে  প্রাক্তন পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র যেখানে  পার্সিরা নির্যাতিত হয়েছিল এবং তাদের এই ধর্মকর্মকে গোপনে চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। একসময় জরোয়াস্ট্রিয়ানিজমে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ অনুসারী ছিল আর এখন ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ মানুষ ইরানে এইধর্মে দীক্ষিত আছেন।ভারতের মুম্বাই এবং গুজরাতের আশপাশে ৫০,০০০ এর মতো মানুষ এই ধর্মের অনুসারী এবং এক হাজারেরও কম সংখ্যক মানুষ পাকিস্তানে অবশিষ্ট আছে। এদের মধ্যে যাদের পিতামাতা জরোয়াস্ট্রিয়ান ধর্মানুসারী তাদেরকেই একমাত্র সত্যিকারের গোঁড়া বলা হয় । তারাই একমাত্র অন্য ধর্মে বিবাহকে ভ্রুকুটি দেখায়। অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সাথে বৈবাহিক বন্ধ নে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখার কারনেই এদের মধ্যে বিবাহ ব্যাপারটা খুব কঠিন হয়ে উঠেছে ফলে পার্সি  ধর্মানুসারি জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

রামিয়ার কারানজিয়া হলেন মধ্য মুম্বাইয়ের দাদার এনক্লেভ অঞ্চলের একটি পার্সি সেমিনারীর প্রিন্সিপাল। এখানে পুরোহিতদের ছেলেমেয়েরা অংক ও ভূগোলের পাশাপাশি তাদের ধর্মের অনেক রীতিনীতি ও কঠোর নিয়মশৃংখলার অধ্যবসায় করে।  হালকা-পাতরা গড়নের মৃদুভাষী কারানজিয়া আজ থেকে ৫০ বছর আগে ভবিষ্যতে একজন পুরোহিত হওয়ার আশায় এই একই বোর্ডিং স্কুলে শিশু বয়সে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন থেকে নানা মন্ত্র শিখে শুদ্ধতা অর্জন করে আজ তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন। এসব রীতিতে অগ্নি মন্দিরের ভিতরে ২৫ দিনের একটা আইসোলেশন সময় কাটাতে হয় এবং ভোর থেকে সন্ধা পর্যন্ত উপবাস করতে হয়। এই আভিস্তার মন্ত্রের মূল ১৭ টি পর্বে ভাগ করা আছে যেগুলো আহুরা মাজদা থেকে উদ্বৃত তাদের প্রফেট জরাথ্রুস্টার উদ্দেশ্যে। সবচেয়ে পুরাতন ছত্রগুলো প্রায় ৩৫০০ বছর পূর্বে মধ্য এশিয়ায় ব্রোঞ্জের যুগে পুরাতন আভেস্টান থেকে নেয়া হয়েছে।এর পরে আছে ভেন্ডিডাড , যাযকীয় সংক্ষিপ্তসার এবং সামাজিক আইন যা ২১ টি বইয়ের মধ্যে অন্যতম । এবং এটিই হলো জরোয়াস্ট্রিয়ানের দেহ। এটিই একমাত্র যেটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে।

মুম্বাইয়ে পার্সিদের একটি ডাডার সেমিনারীতে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা

জরোয়াস্ট্রিয়ান সম্প্রদায় তাদের নেতৃত্বের জন্যে যাযকদের দিকে চেয়ে থাকে। পার্সি সংস্কৃতিতে একমাত্র যাযকের সন্তানই যাযকের সন্তানেই যাযক হতে পারবে।একজন যাযক হয়তো বছরে হয়তো ৫০,০০০ রুপি আয় করতে পারবে, যা ভারতবর্ষে খুবই কম একটা আয়। আবার তাদের নেই কোনো চিকিৎসা ভাতা বা পেনসন সিস্টেম। তাই বেশীরভাগ মোবেড বা যাযকরা পার্টটাইম চাকুরী কিংবা অন্য পেশায় নিয়োজিত হন।

খুব বেশী আগের কথা নয় প্রায় দুই ডজন ছাত্র একটি ডাডার সেমিনারীতে যোগ দিয়েছিল। কারেনজিয়া খুব আক্ষেপ করে বললেন, এখন মাত্র ১৪ জন আছে।প্রায় কয়েক দশকধরে অন্য পার্সি সেমিনারীগুলোতে কোনো ছাত্র আসেনা বললেই চলে।

এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পার্সি সম্প্রদায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একেবারেই নিম্নমূখী। ধর্মীয় নেতারা গবেষকরা বলছেন যে, পার্সি নারী-পুরুষেরা বেশী বয়সে বিয়ে করতে পছন্দ করছে এজন্যে তাদের সন্তানাদির সংখ্যাও কম থাকে। এর মানে হলো একটি পার্সি শিশু জন্ম নিলো মানে চারজন পার্সি মারা গেল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘জিও পার্সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানও শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যে সেই প্রোগ্রামে জন্মবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পুরুষদের কনডম ব্যবহারেও অনুৎসাহিত করা হয়েছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024