রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের উচিৎ নিরাপত্তাহীনতার দুষ্টচক্রকে ভাঙ্গার চেষ্টা করা

  • Update Time : শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ৪.১৭ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

২০২৩ সালের শেষের দিকেই যুদ্ধ শুরু হলো আফ্রিকায়, ইসরাইল ও গাজায় এবং ইউক্রেনে। এই সমস্যাগুলো তাদের নিজেদের অধিকারের জন্যে অপ্রত্যাশিত ছিল। এর সাথে যুক্ত হলো আমেরিকার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন যেখানে আশা করার সুযোগ ছিল যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম পৃথিবীতে যুদ্ধ চলবে নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

২০২০ এর ভাগ্য বিপজ্জনক ছিল নানা কারনে। বিশেষ করে মহামারী। ১৯ শতকের পর প্রথমবার বিশ্ব জিডিপিতে পশ্চিমের অংশ ৫০%-এর দিকে নেমে এসেছে । ভারত এবং তুরস্কের মতো দেশগুলি বিশ্বাস করে যে ১৯৪৫ সালের পরে তৈরি করা বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলি তাদের উদ্বেগের ধার ধারেনা। চায়না এবং রাশিয়া আরও এগিয়ে গিয়ে এই পদ্ধতিকে ধ্বংস করতে চায়। যদিও আমেরিকার অর্থনীতি এখনও প্রসিদ্ধ তবুও তার চারদিকের ভালো মুহূর্তগুলো শেষ হয়ে গিয়েছে। ইউরোপে মিত্ররা এবং জাপান আপেক্ষিক অর্থনৈতিক পতনের মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক ভূমিকায় আমেরিকার জন্য মধ্যবিত্তদের মধ্যে হালকা সমর্থন রয়েছে এবং রিপাবলিকান পার্টিতে একটি বিচ্ছিন্নতা সমর্থন আছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ

২০২৩ এর শুরুতে আমেরিকা এই বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যস্ত ছিল, বিশেষ করে  বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নে । ধারণাটি ছিল আরও নির্বাচনী, এমনকি স্বার্থপর, পরাশক্তি ধরনের। অগ্রাধিকার মানে ছিল চায়নাকে মোকাবেলা করার জন্য আফগানিস্তান ছেড়ে আসা এবং এশিয়ায় সম্পদ স্থানান্তর করা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং ইউরোপে জোটগুলোকে নতুন করে উজ্জীবিত করা হয়েছিল। ন্যাটোকে সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং ইউক্রেনকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। শক্তি এবং প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে ব্যবহৃত হতো। যদিও দেশীয় শিল্প ভর্তুকি অদক্ষ, শক্তিশালী ছিল: ২০২৩ সালের মাঝামাঝি আমেরিকান কারখানা নির্মাণ ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে সর্বোচ্চ হারে আঘাত হানে।

নতুন সবিকিছুই এখন অস্থিরতায় ভুগছে। ১৯৯০ এর পরে অনেক দেশই নিজেদের স্বাধীনতার ধারাবাহিকতা , বাজার অর্থনীতি এবং আইনী ধারার বিশ্বায়নের আশা করেছিল। এখন সেখানে একটি অপ্রত্যাশিত জনসমর্থন, নাক গলানো অর্থনীতি এবং দেয়ানেয়ার বিশ্বায়ন চলমান। তাই ২০২৪ এ এখন তিনটি হুমকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

গাজায় চলছে অমানবিক যুদ্ধ

প্রথমত, দায়মুক্তির একটি ক্রমবর্ধমান অঞ্চল রয়েছে যেখানে বৈশ্বিক শক্তি বা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলি পদদলিত হয় না। আপনি লোহিত সাগর থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত ৬,০০০ কিমি হেঁটে গেলে  ছয়টি আফ্রিকান দেশের উপর দিয়ে যেতে হবে  যারা গত ৩৬ মাসে অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। আজারবাইজান সবেমাত্র খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি  ছাড়াই আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলের যুদ্ধ করেছে । ইরান মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছিল একটা উৎকন্ঠার বিষয় । ২০২৪ সালে দায়মুক্তির এই অঞ্চলটি আফ্রিকা এবং রাশিয়ার সীমানা জুড়ে আরও প্রসারিত হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, চায়না, ইরান এবং রাশিয়া  এই তিন দেশ সমন্বিত সমস্যার জন্যে দায়ী। পশ্চিমা মিত্রদের তুলনায় তাদের মধ্যে অনেক কম মিল রয়েছে এবং চায়না অন্যদের তুলনায় অনেক বড় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও একীভূত অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের স্বার্থ নষ্ট  করে: সকলেই আমেরিকার বৈধতা দূর্বল করতে চায় এবং প্রকৃত বা সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চায়। চায়না, রাশিয়া ও ইরানের তেল কেনে। কেউই হামাস বা ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করেনি। তাদের সহযোগিতা প্রযুক্তিতে প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনায় । চায়নার অর্ধেক বাণিজ্য এখন ইউয়ানে। ইরান রাশিয়ায় ড্রোন রপ্তানি করে; চায়না এবং রাশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে পারমাণবিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং টহল নিয়ে সহযোগিতা করে। ২০২৪ সালে বিশ্ব দেখবে যে এই আশাবাদি ক্লাবটি কতদূর যেতে পারে।

চূড়ান্ত হুমকি হল পশ্চিমা জোটের ভঙ্গুরতা

ইউক্রেনের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া ছিল ভীতিজনক: আমেরিকা এবং ইউরোপ একত্রিত হয়েছিল, জনমত সমর্থন করেছিল এবং ১৯৪৫ সালের আদেশের নীতিগুলিকে রক্ষা করা হয়েছিল। এখন, একটি সামরিক অচলাবস্থা যাচ্ছে। আমেরিকায় রিপাবলিকানরা ইউক্রেনের জন্য তহবিল নিয়ে বিভক্ত। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন আরও বিভক্ত: এটি ইইউ এবং আমেরিকাকে বিভক্ত করেছে, যা জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।

অন্যান্য সংকট আরও বিভক্তি প্রকাশ করতে পারে: ইউরোপ কি তাইওয়ানকে রক্ষার লড়াইয়ে আমেরিকার সাথে যোগ দেবে?

২০২৪ সালে এই হুমকিগুলি কীভাবে কার্যকর হবে তা আংশিকভাবে পশ্চিমের স্বৈরাচারী প্রতিযোগীদের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে। ঠিক যেমন চায়না, ইরান এবং রাশিয়ার বিভিন্ন শাসনের কিছু স্বার্থ রয়েছে, তেমনি তাদের কিছু অনুরূপ দুর্বলতা রয়েছে। সকলেই অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং কঠিন দমন পীড়নের উপর নির্ভর করে। ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে একটি বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল; আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বয়স ৮৪ এবং তার কোন সুস্পষ্ট উত্তরসূরি নেই; শি জিনপিং বাদ দেয়া বা পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এসব না করে তাদের উচিৎ অন্যদের অনুকরণ করা যারা প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাস ও চর্চা করে।

তবে আমেরিকার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। একজন অসুস্থ্য  রাষ্ট্রপতি রাতারাতি চুক্তিগুলি বাদ দেবেন না তবে দ্রুত পরীক্ষা করা হবে: এখানে চায়নার তাইওয়ানের জাহাজ “পরিদর্শন” এর কথা ভাবতে হবে। আবার রাশিয়া তার সীমান্তের “পুনর্ব্যাখ্যা” করার দাবী করে প্রতিবেশীকে দখল করার কথাও আনতে হবে। আমেরিকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে, ইউরোপ ইউক্রেনে সৈন্য দেবে কিন্তু তহবিল বা সামরিক শক্তি সরবরাহ করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। এশিয়ান মিত্ররা চায়নাকে শান্ত করবে এবং তাদের প্রতিরক্ষা জোরদার করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবের মতো মধ্যশক্তিগুলো পারমাণবিক অস্ত্র খুঁজতে নামতে পারে।

আমেরিকা যদি ২০২৪ সালের শেষের দিকে একজন আন্তর্জাতিকতাবাদী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারে, তবে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024