মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

এশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া যুদ্ধ-কালীন রাশিয়ার জন্যে আশির্বাদ

  • Update Time : শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ৩.০৪ পিএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিকটজন বলে পরিচিত একজন বিজনেস টাইকুন মেটাল ম্যাগনেট ওলেগ ডেরিপাস্কা

সারাক্ষণ ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিকটজন বলে পরিচিত একজন বিজনেস টাইকুনের মতে, “ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের পরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এশিয়ার দেশগুলির সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি ভালো অবস্থায় আছে।”

মেটাল ম্যাগনেট ওলেগ ডেরিপাস্কা মিডিয়াকে বলেন, “ ইন্ডিয়া এবং চায়নাতে রাশিয়ার সাথে আমদানী-রপ্তানী চলমান রাখতে পারায় অর্থনীতির অবস্থা ভালো অবস্থানে অস্থান করছে।” সোমবার টোকিওতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ব্যবসার ক্ষেত্রে অপর পক্ষের ভূমিকা মূখ্য।”

২০২২ সালের শুরু থেকেই ইউরোপের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় যখন অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর সহ জি-৭ এবং তাদের মিত্ররা ইউক্রেনের যুদ্ধের কারনে  রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অপরদিকে ইন্ডিয়া অফিসিয়ালি  ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের নিন্দা করেনি এবং যুদ্ধ শুরুর পরে ইন্ডিয়া থেকে রাশিয়া থেকে নজীরবহীন আমদানী শুরু করে। ইইন্যান সরকারের তথ্য মতে, মাত্র ২০২৩ সালের ১২ মাসেই ইন্ডিয়া ৪৬.২ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানী করে যা এর আগের বছরের তুলনায় ৩৬৮% বেশী।

যুদ্ধ শুরুর পর থেতে চায়না এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে রাশিয়ার ব্যবসা বেড়ে গেছে। চায়নিজ সরকারের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়াতে চায়নার রপ্তানী ৫০% বেড়ে গেছে পাশাপাশি, এই একই সময়ে রাশিয়া থেকে আমদানীর পরিমানও ১২% বেড়ে গেছে।

রাশিয়ান পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আসিয়ানের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি  ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপাক্ষিক ট্রেড ৪৫% বেড়ে ৪.৮ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যুদ্ধের শুরুতে চায়নার সাথে ব্যবসা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন প্রতিটা দেশই ভাবছে তাদের নিজেদের সুবিধার কথা। তিনি বলেন,“নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রনের গুরুত্ব সম্পর্কে ইন্ডিয়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রুপ অব ২০ সামিটে আলোচনা করে।”

এই গ্রুপের চূড়ান্ত বিবৃতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের নিন্দা করেনি। গত মাসে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলোচনায় তাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরো বাড়বে বলে ঘোষণা আসে। দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে  তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো ৫০% বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার আশা করছে।

৩১ শে জুলাই, ২০২৪ এ  ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তোর সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনের ক্রেমলিনে বৈঠক।

এই ঘোষণা আসে যখন মস্কোর ট্রেড ঝামেলার কারনে জুনে পশ্চিমা-নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ান ব্যাংকগুলির সাথে চায়না কিছু নির্দিষ্ট অপারেশন বন্ধ করে দেয়। নতুন বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি মনে হয়েছিল রাশিয়ার  বাণিজ্যকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের মতে, অগ্রসর অর্থনীতি এবং  ২০২২ সালের ১.২% দুর্বলতা কাটিয়ে  এই বছর দেশটির জিডিপি বেড়ে ৩.২% হওয়ার আভাস দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অনুমান মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ চলমান থাকা সত্বেও এর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো অবস্থানে আছে যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে মস্কোকে এই যুদ্ধে কমপক্ষে ২১১ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে।

ডেরিপাস্কা, যিনি এই মাসের শুরুতে জাপানে অনুষ্ঠিত APEC এর বিজনেস এডভাইজরি কাউন্সিল মিটিং এ রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মিটিং এর শেষ দিনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমালোচনা করে বলেন, “ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া একটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুইনা।”

 

জুলাই ২০২৪ এ কাজাক প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ (বাম থেকে দ্বিতীয়) আস্তানায় চায়না, রাশিয়া, তাজিকিস্তান ও বেলারুশ নেতাদের সাথে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন মিটিং এ।

অতি দ্রুত ইউক্রেনে নি:শর্ত যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ আপনি যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান, ততাহলে আগে আগুন নেভান।” ডেরিপাস্কা হলেন রাশিয়ান এলুমিনিয়াম প্রোডাক্শন জায়ান্ট রুসাল এবং এর প্যারেন্ট এনার্জি কোম্পানী En+ Group এর প্রতিষ্ঠাতা । পাশাপাশি, তিনি আরো অনেক বেসিক এলিমেন্টেরও প্রতিষ্ঠাতা। ফোর্বসের মতে, তিনি ৩ বিলিয়ন ডলারের মালিক।

রাশিয়ান সরকারের সাথে তার সামান্য যোগাযোগ থাকার কারনে ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তিনি তার উপরে নিষেধাজ্ঞার লিস্টে থাকা আরো দেশের মধ্যে ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার কথাও জানান যা ২০২২ সাল থেকে কার্যকর হচ্ছে। ব্রিটেন পুটিনের সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারন দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় তাকে ব্রিটেনে ভ্রমণ এবং তার অর্থনৈতিক সম্পদ ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে।

ডেরিপাস্কা মিডিয়াকে জানান, টোকিওতে  ভ্রমনের সময় তিনি জাপান সরকারের কোনো কর্মকর্তা কিংবা ব্যবসায়ীর সাথে আলোচনা করেননি। তিনি উইক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে নিন্দা করেছেন যদিও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সোষিতে তার মালিকানার একটি হোটেলকে অবরোধ দেয়।

পুটিনের সাথে তার বর্তমান যোগাযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডেরিপাস্কা কোনো কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বললেন, কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। একজন ব্যববসায়ী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে তিনি বলেন, “ক্রেমলিন আমাকে কিছু করেনি, আমরা রাজনীতি করিনা।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024