সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

ভারতে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক নজরদারি

  • Update Time : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ৩.২৬ পিএম
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে

কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে, তার ওপরে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ সারাদেশে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ বিক্ষোভ করছেন।

এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন-বিরোধী সব দলগুলো প্রতিবাদ করছে এই ঘটনার।

রাতের বেলায় নারীর নিরাপত্তার দাবিতে বুধ আর বৃহস্পতিবারের মাঝ রাতে লাখ লাখ নারী-পুরুষ কলকাতার রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ করছেন।

এরপর নির্মম ওই ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চেয়ে শুক্রবার মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আবার ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করেছে বিজেপি।

মিছিল, পাল্টা-মিছিল, বনধ একই সঙ্গে সব চলেছে শুক্রবার।

কেবল মাঠে ময়দানে নয়, সামাজিক মাধ্যমেও চলছে তুমুল আলোচনা আর বিক্ষোভ।

কিন্তু তার মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের নজরদারি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

কলকাতা ফুটবলের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকরা রবিবার একসঙ্গে আরজি করের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদে নামেন

পুলিশের নজরদারি কীভাবে কেন হচ্ছে

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে যেসব পোস্ট পুলিশের কাছে আপত্তিকর মনে হচ্ছে, তাদের নোটিশ পাঠিয়ে পোস্ট মুছে দিতে বলা হচ্ছে।

আবার পুলিশ সদর দফতরে ডাকও পড়ছে কারও কারও।

পুলিশ যাদের ইতোমধ্যে ডেকে পাঠিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সংসদ সদস্য, একজন নামকরা চিকিৎসক এবং একজন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

ভারতের স্থানীয় সংবাদপত্রে পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখা হচ্ছে যে এরকম প্রায় ২০০ জন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

কোনও একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমের ওপরে এ ধরণের পুলিশি নজরদারি এর আগে দেখা যায় নি।

তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের নেতা ও সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় এ ঘটনা নিয়ে বরাবরই সরব ছিলেন। নামকরা শল্য চিকিৎসক কুনাল সরকার একটি ইউটিউব ভিডিও করেছিলেন ওই ধর্ষণ ও হত্যার বিষয় নিয়ে।

এদের দুজনকে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অন্যদিকে, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বারবার নিজেরাই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছে যে, আরজি করের ঘটনা নিয়ে বহু গুজব ও ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

নাগরিকদের এ ধরণের তথ্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।

একই সাথে, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও ভুয়া তথ্য না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ও খুন হওয়া চিকিৎসকের পরিবার-পরিজনও।

তবে, সামাজিক মাধ্যমে এভাবে পুলিশি নজরদারি যেমন আগে দেখা যায় নি, তেমনই একের পর এক অভাবনীয় প্রতিবাদ হচ্ছে আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে।

আরজি করের ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ চলছে এখনো। নানা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিলে নামছে কলকাতা এবং মফস্বল শহরগুলোতে।

সোমবারও শহর জুড়ে নানা বিক্ষোভ মিছিল, জমায়েত হবে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবাদ হচ্ছে রাজ্যের বাইরেও।

সারা দেশে জুনিয়র এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে।

দিল্লিতে এইমস-এর ধর্মঘটী রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সোমবার থেকে তারা রাজধানী দিল্লির নির্মাণ ভবন, যেখানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দফতর, তার সামনে রাস্তায় বসে রোগী দেখবেন ডাক্তাররা।

ফুটবল-প্রেমীদের প্রতিবাদ

অভাবনীয় প্রতিবাদের মধ্যে ছিল রবিবার কলকাতা ফুটবলের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল – ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সমর্থকদের এক হয়ে ওই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ করা।

এর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন আরও এক বড় ক্লাব মহমেডান স্পোর্টিংয়ের সমর্থকরাও।

এই প্রতিবাদের সূচনা কদিন আগে। ডুরাণ্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ ছিল রবিবার ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের। দুই দলের সমর্থকরা আগে থেকেই জানিয়েছিলেন যে ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামে আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদ হবে।

এরপরে প্রশাসন ওই ম্যাচ বাতিল করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এতে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়।

তাদের একটা অংশ রবিবার একসঙ্গে স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হয়ে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতে থাকেন। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন দুই দলেরই বেশ কয়েকজন ফুটবলারও।

কলকাতায় রাতের রাস্তা দখল কর্মসূচীতে লাখ লাখ মানুষ মাঝ রাতে রাস্তায় নেমেছিলেন

তবে, পুলিশ স্টেডিয়ামের অনেক আগে বিভিন্ন জায়গায় সমর্থকদের আটকে দেয়।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘাত বাঁধে। লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে পুলিশ টিয়ার শেলও ছোড়ে।

গ্রেফতার করা হয় তিন দলের সমর্থকদেরই। রাতে আবার তারা জড়ো হন যাদবপুরে, সেখানে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ।

ময়দানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের সমর্থকদের একাংশের প্রতিবাদ নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে বহু পোস্ট দেখা গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।

শীর্ষ আদালতের যে ‘কজ লিস্ট’ বা মামলার তালিকা প্রকাশিত হয়েছেআগামীকালের জন্য, তাতে লেখা হয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার ‘সুয়ো মোটো’ মামলাটি তালিকাভুক্ত করেছে।

মামলাটিকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেওয়ার কথাও লেখা হয়েছে। এর আগে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

এদিকে, কলকাতা পুলিশের তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট না হয়ে তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

সিবিআই গত কয়েকদিনে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, ডাক্তারসহ সদ্য প্রাক্তন প্রিন্সিপালকে জেরা করেছে।

কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তাদের তদন্ত করে পাওয়া সব নথি নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে সিবিআই।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024