শিবলী আহম্মেদ সুজন
এসব সুবিধাজনক পরিস্থিতি না থাকলে সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানো প্রায়শ কষ্টকর হয়ে ওঠে। আজ পর্যন্ত সাপুড়ে বা ওঝাদের তন্ত্রমন্ত্র হাত নয়তো পায়ে কামড়ানো রোগী ছাড়া অন্যত্র কামড়ানো রোগীকে বাঁচিয়ে তুলেছে, এমন কথা খুব একটা শোনা যায় না।তবে এটাও ঠিক যে সাধারণ পরিসংখ্যানের নিয়মে (প্রোবাবিলিটি) সাপের মানুষের হাত বা পায়ে কামড়ানোর আশঙ্কাই বেশি থাকে।
সাপুড়ে বা ওঝারা সাপে কামড়ানো রোগী পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের করণীয় কর্তব্য হিসেবে যা করে, তা যথার্থ অর্থে আধুনিক চিকিৎসার পর্যায়ে পড়ে। প্রথমত, তারা রোগীর কামড়ানো জায়গাটা একটু বেশি করে কেটে ফেলে বহির্মুখী রক্তক্ষরণের সুবিধা করে দেয়।
পরে রোগীর পায়ে বা হাতের আঙুলে একটা রশি বেঁধে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে সুরেলা অথচ দুর্ভেদ্য ভাষায় শ্লোক-মন্ত্র আওড়াতে থাকে। সেই দেহভঙ্গি ও সুরেলা মন্ত্রাচারে একটা সম্মোহনী শক্তি থাকা স্বাভাবিক। উপস্থিত নিরীহ দর্শকশ্রেণীর সবাই তাতে আকর্ষিত হয়, মুগ্ধ হয়।
হাতে টানা দড়ি ধরে ওঝা সারা শরীর থেকে রক্ত কাচিয়ে ক্ষতস্থান বা হাত- পায়ের আঙুলের দিকে টেনে আনার চেষ্টা চালায়। রক্তধারা নিম্নমুখী হলে সাপুড়ে বা ওঝা বহমান রক্তনালিতে মুখ লাগিয়ে তা চুষে নেওয়ার অভিনয় করে। অনেক ক্ষেত্রে তা সত্যিকার অর্থে চুষেও নেয়।
চোষণের একটা প্রত্যক্ষ উপকারী দিক রয়েছে। তাতে করে ওঝার জীবননাশের আশঙ্কা থাকে না। সাপের বিষ রক্তে না মেশা পর্যন্ত তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
আসলে বিষাক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে সফলভাবে রক্ত টেনে বের করে ফেলার মধ্যেই ওঝার সব কৃতিত্ব। গাছের কাঁটা, পাতা-লতা, শেকড় ও মন্ত্রতন্ত্রের সঙ্গে সাপে কাটা রোগীর আরোগ্য লাভের কোনো সম্পর্ক নেই।
ক্ষতস্থানে সময়মতো রশি বাঁধা, নিম্নমুখী রশি টানা এবং দূষিত রক্ত নিষ্কাশনের সহায়ক বিধিব্যবস্থা না থাকলে বা চোষণে পারদর্শী না হলে ওঝার সব কেরামতি ও সম্মোহনীবিদ্যা বিফলে যেতে বাধ্য।
সাপের কামড়ে মৃত ঘোষিত ব্যক্তি পরে জীবিত হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে আমরা এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হলেও লোকপরম্পরায় এ ধরনের কথা শোনা যায়। এর কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত সত্যতাও রয়েছে বলে মনে হয়।
এ ঘটনা আশ্চর্যজনক মনে হলেও স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণকারী সাপের বিষের বেলায় তা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু রক্ত সংবহনতন্ত্র আঘাতকারী বিষের বেলায় তা সম্ভব নয়। স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণকারী বিষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে প্রভাবান্বিত করে হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ করে ফেলতে পারে।
Leave a Reply