শিবলী আহম্মেদ সুজন
বিষক্রিয়ার তীব্রতা কমে এলে বা নির্দিষ্ট প্রতিবেশতাত্ত্বিক প্রভাবে ও শারীরবৃত্তীয় প্রতিরোধ বা সংশোধন কলাকৌশলের ঘাত-প্রতিঘাতে থেমে যাওয়া হৃৎপিণ্ডকে আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে। এ জন্য অধুনা শুধু হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই মৃত্যুর সংজ্ঞা টানা হয় না।
বরং প্রাণীর সামগ্রিক শারীরবৃত্তীয় অচলাবস্থার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। হিন্দুধর্মমতে, সাপে কাটা মৃত ব্যক্তিকে না পুড়িয়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে। মনসামঙ্গল কাব্যের লখিন্দরের বেলায়ও তা-ই হয়েছিল। ব্যাপারটা বিজ্ঞানসম্মতও বটে।
এই অবস্থায় কেউ কেউ বেঁচেও উঠেছে বলে শোনা যায়। এই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকেই হয়তো অনেক সময় মৃতজনের দেহে ঠান্ডা জিনিস প্রয়োগ করে ওঝাদের কৃতকার্য হতে দেখা গেছে। মানবদেহে তড়িতাঘাতের মতো হিমাঘাতেরও (কোল্ড শক) যথেষ্ট শারীরবৃত্তীয় প্রভাব রয়েছে।
এ ধরনের সফলতার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সেই কৃতী সাপুড়ে বা ওঝাকে নিয়ে হইচই পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আবার এও শোনা গেছে, সাপে কাটা মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে নষ্ট হয় না। যেভাবে কবরে রাখা হয় সেভাবেই থাকে।
এর কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তবে এমনটা হতে পারে, বিশেষ কোনো প্রাতিবেশিক অবস্থা (ঠান্ডা মাটির অস্বাভাবিক গঠনবিন্যাস, পচন অণুজীবের অনুপস্থিতি) সেই সাপে কাটা রোগীর দেহ দ্রুত পচনে সহায়ক না-ও হতে পারে। তবে ব্যাপারটা অনন্তকাল ধরে চলবে মনে করার কারণ নেই।
সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানোর জন্য কোথাও কোথাও কড়িতে মন্ত্র পড়ে ছেড়ে দেওয়ার কাহিনির প্রচলন আছে। কিন্তু সেটা অবাস্তব কেচ্ছারই নামান্তর। কড়ি মাথায় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া সাপে রোগীর ক্ষতস্থানে মুখ লাগিয়ে নামাজনে নেওয়ার ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেখানে ভেলকিবাজির মতো কিছু থাকতে পারে। ব্যাপারটা সম্ভব হতে পারে, কেবল কিছুটা সাপুড়ের পোষা সাপের মাধ্যমেই।
প্রখ্যাত লেখক রেজাউর রহমান–এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
Leave a Reply