সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

সালাম মুর্শেদীর সেই বাড়ি ৯০ দিনের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশ হাইকোর্টের

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৭.০৭ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর গুলশানে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর সেই বাড়ি সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯০ দিনের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে ১৯ মার্চ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। আর রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অনীক আর হক।
রায়ের পর অনীক আর হক বলেন, সালাম মুর্শেদী গুলশানের যে বাড়িটিতে বসবাস করছেন সেটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এটি নিয়ে দীর্ঘ শুনানির পর মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন- এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। তা সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে। তাই এটি হস্তান্তর (সালাম মুর্শেদীর কাছে) সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এটি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছেন, জনস্বার্থের মামলায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার রায় বিরল। কোনো উপযুক্ত আদালত এর আগে সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে কোনো রায় দেননি। সরাসরি হাইকোর্টে এসে বাড়ি নিয়ে জনস্বার্থে মামলা করলেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এ ধরনের রায় বিরল। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।
আদালত রায়ে বলেছেন, দুদকসহ অন্যান্য সংস্থার তদন্ত রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে সালাম মুর্শেদী গুলশানের যে বাড়িতে বসবাস করছেন সেটা সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি। গত ৩ মার্চ বাফুফে সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে শুনানি শেষ হয়।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর খুলনা-৪ আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে গুলশানের বাড়িটি দখলের অভিযোগ তুলে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছিলেন, রাজউকের ও দুদকের হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে গুলশানে সালাম মুর্শেদী যে বাড়িতে বাস করছেন সেটা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এই বাড়িতে তিনি এখন এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, মানুষ অপহরণের মত সালাম মুর্শেদী গুলশানের বাড়ি অপহরণ করে বাস করছেন। এই বাড়িতে তিনি প্রতি সেকেন্ড অবৈধভাবে বাস করছেন।
এ সময় হাইকোর্ট রাজউকের আইনজীবীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, সেটেলমেন্ট কোর্টের অর্ডার ছাড়া এই সম্পত্তি কিভাবে সালাম মুর্শেদীর কাছে হস্তান্তর করা হলো? গত বছরের ১ নভেম্বর সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ সম্পত্তি সম্পর্কিত সব কাগজপত্র ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ ও সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন আদালত।
তারও আগে সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন (দুদক)। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত মূল নথি ও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট করে এক সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024