শ্রী নিখিলনাথ রায়
উধুয়ানালার যে স্থানে ইংরেজেরা মীর কাশেমের সৈন্তদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন, অম্লাপি সে স্থান সমভাবেই বিরাজ করিতেছে। সেই খানে একখানি নূতন গ্রাম স্থাপিত হইয়াছে; তাহার নাম উধুয়া। পূর্ব্বে সেই পর্ব্বতময় স্থানে কোন গ্রাম ছিল না; কিন্তু তথায় একটি প্রাচীন দুর্গ ছিল। এই উধুয়া গ্রামের নিকটে উধুয়ানালা গঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে; কিন্তু বর্ষাকাল ব্যতীত অন্যসময়ে ফুকিপুর পর্যন্ত উধুয়ানালার চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উধুয়ানালা যে স্থানে প্রবাহিত ছিল, এক্ষণে প্রায়ই সেইরূপ ভাবেই আছে।
বকাইয়ের দাঁড়ার সহিত উদ্ঘানালা মিলিত হইয়াছে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে স্থানে মিলিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা হইতে উত্তর- পশ্চিম দিকে মিলিত হইয়াছে। বর্তমান ফুকিপুর উধুয়া হইতে প্রায় এক ক্রোশ দক্ষিণ-পূর্ব্বে। কিন্তু যে স্থানে ইংরেজ শিবির সন্নিবেশিত হইয়াছিল, তাহা বর্তমান ফুকিপুর হইতে প্রায় এক ক্রোশ দূরে। সেই স্থানকে এক্ষণে কাঁঠালবাড়ী কহে। কাঁঠালবাড়ীর পশ্চিমে পাহাড়পুর নামক স্থানে ইংরেজশিবির সন্নিবেশিত হয়। অ্যাপি তথায় পরিপার চিহ্ন আছে। ক্ষুদ্রকিপুর প্রসিদ্ধ স্থান বলিয়া তৎসন্নিহিত ক্ষুদ্র পল্লীগুলিও ফুংকিপুর নামে অভিহিত হইত।
ফুকিপুর গ্রামের কিছু কিছু স্থান পরিবর্তিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়। উর্দুয়া গ্রামের পূর্ব্বে ও উত্তরে গঙ্গা। যে একক, বিচ্ছিন্ন পাহাড়টি নবাব- শিবিরের রক্ষাস্তম্ভরূপে নিন্দিষ্ট হইয়াছিল, যাহার দুই পার্শ্ব হইতে একদিকে গঙ্গা ও অন্যদিকে দূরস্থিত পর্ব্বতশ্রেণী পর্যান্ত পরিখা বিস্তৃত হইয়াছিল, সেই পীরপাহাড় অদ্যাপি সমভাবে বিরাজ করিতেছে। এই পীরপাহাড়ে কিছুকাল পূর্ব্বে একটি দরগা স্থাপিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহার অস্তিত্ব নাই; তবে তাহার কিছু চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। মীর কাশেমের বুরুজ ও মৃৎপ্রাচীরের চিহ্ন অদ্যাপি স্থানে স্থানে বিদ্যমান আছে।
পরিখা প্রায় পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু চিহ্ন একেবারে লুপ্ত হয় নাই। প্রসিদ্ধ। বাদসাহী সড়ক এক্ষণেও গঙ্গার নিকট ও পর্ব্বতশ্রেণীর নিম্ন দিয়া গিয়াছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর সড়কের কিছু পরিবর্তন ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয়। এক্ষণে মুর্শিদাবাদ হইতে রাজমহল অভিমুখে যাইতে হইলে, পীরপাহাড় বর্তমান সড়কের দক্ষিণ দিকে পড়ে। উহা হইতে উত্তরপশ্চিমে কিছু দূরে দুই একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড় আছে; তাহাদের নাম ডুমরী ও বাঘপিঞ্জরা পাহাড়; ইহার নিম্ন দিয়া বর্তমান সড়ক চলিয়া গিয়াছে। ডুমরী পাহাড় নবাবশিবিরের অন্তর্গত ছিল।
Leave a Reply