শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-১৩)

  • Update Time : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫.৪০ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়া জনগোষ্ঠীর কয়েকটি আঞ্চলিক সংস্কৃতি

চিমালতেমাংগো (Chimaltemango) নামে ছোট শহরটি গুয়াতেমালার পঁয়ত্রিশ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। চারপাশে রয়েছে খণ্ডিত জমি। সিয়েরামাদ্রের উঁচু পাহাড় জমি যেন এই ছোট শহরটিকে পাহারা দিচ্ছে। শহরের মূলে বিস্তৃত জমিটি বেশ সমতল। এখানেই আমরা পেয়ে যাই ‘সান্তা আপোলোনিয়া’ নামে একটি ছোট এলাকা। প্রাক স্পেনীয় যুগের সিরামিক শিল্প এই অঞ্চলটির সুনাম বাড়িয়েছে।

এখানে আমরা পাউজুন নামে এক বিশেষ ভারতীয় চিত্রকলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। এছাড়া জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে শস্যের ফলন উপলক্ষ্যে উৎসব পালিত হয়। কেবলমাত্র সিয়েরামাদ্রে নয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে পাহাড়ের কোল বেয়ে মানুষের ঢল নেমে আসে ঐ সময়। সব মিলিয়ে অপূর্ব এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। এরই পাশে রয়েছে সোলোলা (Solola) নামে আরেকটি ছোট এলাকা। গুয়াতেমালা শহর থেকে এই অঞ্চলটির দূরত্ব প্রায় চুরাশি মাইল। এখানে সপ্তাহের মঙ্গল এবং শুক্রবারে বেশ জমজমাট বাজার বসে। এই অঞ্চলটির নিমজিজ সোলোলা (Nimjij Solola) নামে একটি বিশেষ বড় উৎসবের জন্যও বিখ্যাত।

উৎসবটি পালিত হয় ১৫ই আগস্ট। মায়া অঞ্চলের আরো আকর্ষণীয় কেন্দ্র আছে। আতিতলান (Atitlan) হ্রদের তীরেই আমরা পেয়ে যাই পানাজাচেল (Panajachel)। পানাজাচেল পর্যটন কেন্দ্রটি বহু পুরনো। প্রাক-কলম্বিয়া যুগের এই রমনীয় বেড়ানোর শহরটি এখনো লাতিন আমেরিকার অনেক শহরের মানুষকে আকর্ষণ করে। বর্তমানে এখানে আধুনিক স্থাপত্যের বড় বড় হোটেল গড়ে উঠেছে। এছাড়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েকদিন নির্জন আরামে থাকার আনন্দ উপভোগ করার জন্য আবাস, রিসর্ট, দোকান-পাটও গড়ে উঠেছে।

এই পানাজাচেল থেকেই মাত্র দু’মাইল দূরে হাসিখুশী জমকালো পোশাকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে একটি ছোট গ্রাম সান্তা কাতারিনা পালোপো (Santa Catarina Palopo)। এখানকার সুন্দরী মহিলারা তাদের কাপড়টিকে সুন্দরভাবে সমান মাপে তিন খণ্ড বা টুকরো করে। এবং তারপর কালো তাঁতের উপর নকশা করে পোশাকটি বানানো হয়। এছাড়া মহিলারা নিজেরাই অনেক সময় তৈরি করে উইপুল (Huipul) যা অনেকটা ভারতীয় মহিলাদের ব্লাউজের মত দেখতে। মায়া জনগোষ্ঠীর মহিলারা ঐতিহ্যগতভাবেই নিজেদের রূপ সম্পর্কে সচেতন। এবং যতরকমভাবে সম্ভব নিজেদের সুন্দর করে সাজাবার চেষ্টা করে।

এক্ষেত্রে তারা অনেকটাই সফল একথা বলা যায়। পুরুষদের পোশাকের উপরও তারা এই ধরনের নকশা আঁকে। এবং তাতে এই পোশাকও খুব জমকালো হয়ে ওঠে। পানাজাচেল থেকে পাঁচ মাইল দূরে গেলেই দেখা মিলবে সানআনতোনিও পালোপো নামে একটি গ্রামের। নৌকা বা স্থলপথে ছোট গাড়ি করে এই অঞ্চলে পৌঁছান যায়। মায়া জনজাতিভুক্ত কাকচিকেল গোষ্ঠীর লোক এখানে নিজেদের মত করে সারা বছর চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। চাষ বাদেও হস্তশিল্পের কাজে এরা বেশ দক্ষ। মাদুর, পাটজাতীয় দ্রব্য এরা তৈরি করে। হ্রদ-এর মত জলাশয়েও এইসব দ্রব্যের কাঁচামাল চাষ হয়।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১২)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১২)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024