শ্রী নিখিলনাথ রায়
কারাবাস ও অর্থদণ্ডাদির ত কথাই নাই। এই বর্ণনা অতিরঞ্জিত হইলেও জমীদারগণ যে মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ে যারপর নাই কষ্ট ভোগ করিয়াছিলেন, তাহার অনেক প্রমাণ আছে। এইরূপ অযথা অত্যাচারে হিন্দু জমীদারগণ অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। লজ্জায়, অপমানে, কষ্টে তাঁহারা প্রতিনিয়ত আপনাদিগের মৃত্যুকামনা করিতে লগিলেন। মনুষ্য সহস্রগুণে বলহীন হইলেও, অত্যাচারের ঝটিকা যখন তাহাকে আক্র- মণ করে, তখন তাহা অতিক্রম করিতে প্রাণপণে প্রয়াস পাইয়া থাকে; তখন তাহার ক্ষীণ শক্তি দৃঢ়সংহত হয়। তাই মুর্শিদকুলী খাঁর রাজত্বে এই অত্যাচার অসহ্য হওয়ায় বাঙ্গলার দুইজন হিন্দুবীরের অভ্যুদয় হইল। বে বাঙ্গলা দ্বাদশ ভৌমিকের জননী, রাজা প্রতাপাদিত্য প্রভৃতি যাঁহার সন্তান, তাঁহা হইতে দুই একজন পুরুষকার সম্পন্ন ব্যক্তির যে অভ্যুদয় হইবে, ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। উক্ত দুই জনের মধ্যে একজন ভূষণার জমী- দ্বার রাজা সীতারাম রায়; দ্বিতীয় রাজসাহীর জমীদার রাজা উদয়নারায়ণ রার। সীতারাম রায়ের বিবরণ অনেকেই সবিশেষ অবগত আছেন; কিন্তু উদয়নারায়ণের বিষয় সকলে সম্যরূপে জ্ঞাত না থাকায়, এ প্রবন্ধে তাঁহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদত্ত হইতেছে। কিরূপে তিনি মুর্শিদকুলী– খাঁর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করিয়াছিলেন, ইহা হইতে অনেকেই তাহার অনুমান করিতে পারিবেন।
রাজা উদয়নারায়ণ রায় মুর্শিদাবাদের বড়নগরের নিকটস্থ বিনোদ- নামক গ্রামে জন্ম পরিগ্রহ করেন বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। * বড়নগর ভাগীরথী-তীরবর্তী এবং রাণী ভবানীর প্রিয় বাসস্থান ছিল। বিনোদ তাহারই নিকটস্থিত। এই বড়নগরই আবার উদয়নারায়ণের রাজধানী। উদয়নারায়ণ-বংশীয়দের উপাধি লালা ছিল; এই লালা হইতে তাঁহাকে কায়স্থ-বংশসম্ভূত মনে করা যাইতে পারে। কিন্তু তাঁহারা শাণ্ডিল্যগোত্রীয় রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ; অন্য কোন কারণে তাঁহাদের লালা উপাধি হয়। উদয়নারায়ণ জঙ্গীপুরের সমীপবর্তী গণকরবাসী ভরদ্বাজ- গোত্রীয় ঘনশ্যাম রায়ের কন্যা শ্রীমতীর পাণিগ্রহণ করেন। তাঁহার পুত্রের নাম সাহেবরাম। । যৎকালে মুর্শিদকুলী খাঁ বাঙ্গলার নবাব হইয়া মুর্শিদাবাদে অবস্থিতি করিতেছিলেন, সেই সময়ে উদয়নারায়ণের প্রতি এক বিস্তীর্ণ জমীদারি-শাসনের ভার ছিল। সমগ্র রাজসাহী চাকলা তাঁহার দ্বারা শাসিত হইত। তাঁহার জমীদারি পদ্মার উভয় পারে বিস্তৃত ছিল। বর্তমান মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, সাঁওতালপরগণা এবং রাজসাহীবিভাগস্থ দুই একটি জেলার অধিবাসিগণ তাঁহাকে রাজস্ব প্রদান করিত। তাঁহার সমস্ত জমীদারির নামই রাজসাহী।
Leave a Reply