সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৬) চীন যেভাবে মেক্সিকোকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য প্রবেশ করাচ্ছে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে খেলোয়াড় প্রতি  $১০০,০০০ পুরস্কার ঘোষণা পিসিবি প্রধানের পাকিস্তান ও চায়না সিপিইসি প্রকল্পে সহযোগিতা বাড়াতে অঙ্গীকার করেছে ফের লন্ডনের মেয়র হলেন সাদিক খান – এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার ঢাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে সবজির বাজারে ‘পঞ্চায়েত সিজন-৩’ এর প্রচার চালাচ্ছে নির্মাতারা কিউবার জন্য একটি অসম্ভাব্য সুযোগ গাজীপুরে আগুনে তুলার গুদাম পুড়ে ছাই আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

কাতারের আমির কে? কিভাবে ছোট এই দেশে ব্যাপক পরিবর্তন হলো?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.০৬ পিএম
কাতারের বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি

সারাক্ষণ ডেস্ক

আকবর হোসেন

একটি ছোট অপরিচিত উপসাগরীয় রাজতন্ত্র থেকে কাতার এখন বিশ্বে একটি পরিচিত নাম। কাতারের বর্তমান রাজতন্ত্রের পরিবার গত ১৩০ বছর যাবত দেশটি শাসন করছে। দেশটির ইতিহাসে পরিবারের এক সদস্যকে সরিয়ে দিয়ে আরেক সদস্যের জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের ইতিহাসও রয়েছে।

শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি কাতারের আমির হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৩ সালে। শেখ তামিম যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর।

তার বাবা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি কাতারে জনগণের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীর কাছে এই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক লেখক মেশি কোয়েন মেশি কোয়েন-এর মতে, ছোট্ট এই আমিরাতকে তিনি ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার হাউজ বানিয়েছেন। কাতারের রাজধানী দোহাকে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের জেনেভা হিসেবেও বর্ণনা করেন।

কাতারের রাজধানী দোহা

ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা

ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের ইতিহাস এই পরিবারে বেশ পুরনো। মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের যেসব দেশে রাজতন্ত্র রয়েছে সেখানে নিজের ইচ্ছায় সন্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার নজির নেই।

বর্তমান আমিরের বাবা শেখ হামাদ তার পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৯৬ সালে প্রথম দিকে ক্ষমতায় আসেন। তার বাবাও ১৯৭২ সালে তার চাচাতো ভাইকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন।

অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, পরিবারের মধ্যে কোন বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই ২০১৩ সালে তৎকালীন আমির শেখ হামাদ তার ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

শেখ হামাদ চেয়েছিলেন তার ছেলেকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি নিজে সেটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ছেলের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবেন।

শেখ হামাদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন শেখ হামাদ বিন জসিম, যিনি ছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ কূটনীতিবিদ।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, শেখ হামাদ বিন জসিম ঘনিষ্ঠ সহচর হলেও তাকে নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল তৎকালীন আমিরের।

নতুন আমির শেখ তামিম ক্ষমতা নেবার পরপরই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করে শেখ জসীমকে বাদ দেন।

রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শেখ হামাদ অনেকদিন যাবত চেয়েছিলেন শেখ জসীমকে বাদ দিতে। কিন্তু সেটি পরবর্তীতে তিনি তার ছেলেকে দিয়ে করিয়েছেন।

শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি

বর্তমান আমীরের ইতিহাস

শেখ তামিমের বড় ভাই জাসসীম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি আমির হবার ইচ্ছে ত্যাগ করেন। তিনি জানিয়ে দেন যে তার আমির হবার কোন আগ্রহ নেই। এরপর শেখ থানিকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন তার বাবা।

মিশরে তথাকথিত আরব বসন্ত শুরুর চারদিন আগে ক্ষমতা গ্রহণ করেন কাতারের বর্তমান আমির।

বর্তমান আমির শেখ তামিম ব্রিটেনের রয়্যাল মিলিটারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে কাতারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয় ২০০৩ সালে।

তিনি সামরিক বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার অব চিফ ছিলেন এবং আরও কিছু সরকারি সংস্থায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির সুপ্রিম এডুকেশন কাউন্সিল, সুপ্রিম কাউন্সিল অব হেলথ, সুপ্রিম কাউন্সিল অব এনভায়রনমেন্ট, ন্যাচারাল রিজার্ভস।

কাতারের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঠিক করার জন্য ২০০৮ সালে গঠন করা হয়েছিল কাতার ‘ন্যাশনাল ভিশন ২০৩০’। এই পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য যে সুপ্রিম কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেটির নেতৃত্বে ছিলেন শেখ তামিম।

তার বাবার রেখে যাওয়া পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন বর্তমান আমির। যেহেতু তার বাবা আমির থাকার সময় সেসব ভিশন ঠিক করেছিলেন সেগুলোর সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন শেখ তামিম।

আমির হিসেব অধিষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় তিনি নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, কাতার গ্যাস ও তেল বিক্রির নির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে চায়।

“আমরা ধনী দেশে সেটা ঠিক। কিন্তু আমরা কিভাবে এ পর্যায়ে এসেছি সেদিকেও ফিরে তাকানো দরকার। ১৯৯০’র দশকে আমার বাবা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি মাত্র আট ডলার। রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বেতন দেয়া কঠিন হতো তখন,” বলেন শেখ তামিম।

“একটা সময় আসবে যখন আমরা তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারবো না। সেটা আমরা জানি। এটা হয়তো এতো দ্রুত হবেনা। কবে হবে সেটা জানি না। এজন্য আমরা নানা খাতে বিনিয়োগ করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হচ্ছে শিক্ষা খাতে।”

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য মতে, ২০২১ সালে কাতার শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করেছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। কাতারে যেসব খাত বেশ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে তার মধ্যে শিক্ষা খাত অন্যতম।

পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে কাতারের সম্পর্ক ভালো।

কূটনীতিক সাফল্য

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বার্কলে সেন্টারের গবেষক ডেভিড বি. রবার্টস লিখেছেন, বর্তমান আমিরের বাবা হামাদ বিন খলিফা আল থানি যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি চেয়েছিলেন কাতারকে আমেরিকার প্রভাব থেকে বাইরে নিয়ে আসতে। তিনি চাননি কাতার আমেরিকার দ্বারা পরিচালিত হোক।

কাতার শুধু ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় দেয়নি, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ঘাটি আছে কাতারে।

মধ্যপ্রাচ্যে একটি সক্রিয় এবং প্রভাবশালী দেশ হিসেবে কাতারের আবির্ভাব হয় ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। বর্তমান আমিরের বাবা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি তখন ক্ষমতায় ছিলেন।

লেবানন সংকট:

পর্যবেক্ষকদের মতে কূটনীতির ক্ষেত্রে কাতার প্রথমে সাফল্য দেখিয়েছে লেবাননের সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে। কাতারের মধ্যস্থতায় লেবাননের বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে বিরোধ মীমাংসা করতে রাজি হয়।

টার্কিশ জার্নাল অব মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজে তুরস্কের বিশ্লেষক এসরা কেভুসোগ্লু লিখেছেন – কূটনীতিক ক্ষেত্রে কাতারের বড় সাফল্য আসে ২০০৮ সালে, যখন কাতারের মধ্যস্থতায় লেবাননে হেজবুল্লাহ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।

এর ফলে লেবাননে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। এর আগে আরব লীগ, জাতিসংঘ এবং ফ্রান্স মধ্যস্থতা করে ব্যর্থ হয়েছিল।

আফগানিস্তান সংকট:

আফগানিস্তানের তালেবান ২০১৩ সালে দোহায় তাদের কূটনীতিক অফিস খোলে। সেই অফিস চালুর ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সম্মতি ছিল। এর ফলে বেশ দ্রুত তালেবান শীর্ষ নেতাদের দোহায় যাতায়াত বাড়ে।

অন্যদিকে আমেরিকার কূটনৈতিকরাও কাতারে আসতে থাকে। এর ফলে তালেবানের সাথে আমেরিকার কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতা করার সুযোগ পায়। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সৈন্য সরিয়ে নেবার সময় আবারো কাতারের ভূমিকা সামনে আসে।

আফগানিস্তান থেকে যেসব আমেরিকান এবং আফগান নাগরিক সরিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক আশ্রয় পেয়েছিল কাতারে। তখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কাতারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। বর্তমানে তালেবানের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছে কাতার।

হামাসের সাথে বন্ধুত্ব:

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস-এর শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যেই কাতারে অবস্থান করছেন। কাতারের সাথে হামাস নেতাদের সুসম্পর্কের কথা সবারই জানা।

বিভিন্ন সময় ইসরায়েলের সাথে হামাসকে আলোচনার টেবিলে আনার ক্ষেত্রে কাতার গুরুত্বপূর্ণ রেখেছে।

সর্বশেষ গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হবার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল কাতার।

ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে যে পরোক্ষ যোগাযোগ হয় সেখানেও কাতারের ভূমিকা রয়েছে।

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন ছিল কাতারের জন্য বড় সাফল্য

কূটনৈতিক সমালোচনা

২০১৩ সালে তথাকথিত আরব বসন্তের সময় কাতারের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তিউনিসিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সংকটের সময় কাতার নানাভাবে হতক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব জায়গায় সরকার বিরোধীদের গ্রুপগুলোকে নানাভাবে আর্থিক সহায়তা করেছিল কাতার।

শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন যখন ২০১৭ সালে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাইরাইন কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, এর মাধ্যমে কাতারকে একঘরে করা হয়েছে। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেবার অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গিয়েছিল কাতার।

কাতারের প্রতিবেশীদের অভিযোগ, কাতার আসলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না বরং তাদের রাজধানী দোহা থেকেই সন্ত্রাসের অর্থায়ন হচ্ছে।

কাতারের ওপর অবরোধ দেবার পর দি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা ডেকলান ওয়ালশ ২০১৭ সালে লিখছেন, কাতার যে তাদের দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মত-পথের লোকদের মুক্তভাবে বিচরণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে – এটাই তার প্রতিবেশীদের ক্রোধের কারণ।

তার কথায় , কাতার শহরে আপনি দেখবেন বিচিত্র সব বিপরীত মতপথের লোক বা প্রতিষ্ঠান একই শহরে কাজ করে চলেছে। এখানে আছে নামকরা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা, আবার এখানেই তালেবানের অনেক কর্মকর্তা তাদের পরিবার নিয়ে থাকছে।

তালেবানের লোকেরা যে আফগান রেস্তোরাঁতে খাওয়াদাওয়া করে – তার কয়েক মাইল দুরেই আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি – যেখানে ৯ হাজার আমেরিকান সৈন্য আছে।

সেখান থেকে নিয়মিতই যুদ্ধবিমান উড়ে যাচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, বা আফগানিস্তানে – ইসলামিক স্টেট বা তালেবানের ওপর বোমা ফেলতে।

শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন কাতারের ওপর থেকে তাদের অবরোধ তুলে নেয়।

কাতারের ব্র্যান্ডিং তৈরি

বিশ্বে প্রভাব ও পরিচিতি বাড়ানোর জন্য কাতার দেশ হিসেবে তাদের ব্র্যান্ডিং তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল নানা ক্ষেত্রে।

কাতার তাদের ব্র্যান্ড তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল আল-জাজিরা টিভি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে কাতার আঞ্চলিক প্রভাব তৈরির পাশাপাশি বিশ্বে তাদের পরিচিতি বাড়িয়েছে।

তাছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ এবং বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করাও ছিল কাতারের ব্র্যান্ডিং তৈরির পদক্ষেপ।

কাতার ব্র্যান্ডিং-এর সবচেয়ে বড় আযোজন ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন। তবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে কাতার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিল বলে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছিল।

তবে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় কাতারের আমির শেখ তামিম বলেছিলেন, এই বিশ্বকাপের আয়োজন ছিল সব আরবদের জন্য, শুধু কাতারের জন্য নয়।

বাংলাদেশ সফর করে গেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজতন্ত্র

কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনকে কেন্দ্র করে অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ উঠেছিল কাতারের বিরুদ্ধে।

বিশ্বকাপের সাথে সংশ্লিস্ট অবকাঠামো নির্মাণ করেছে হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক। এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ফিলিপিন্স থেকে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর থেকে কাতারে ৬,৫০০ অভিবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছে।

মৃত্যুর এই সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে এসব দেশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

তবে কাতার সরকার বলছে, মৃত্যুর এই মোট হিসাব বিভ্রান্তিকর, কারণ এই হিসেবে যেসব শ্রমিক যোগ করা হয়েছে তাদের সবাই বিশ্বকাপের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রকল্পে কাজ করছিলেন না।

কাতার বলছে, যারা মারা গেছেন তাদের অনেকেই কাতারে কয়েক বছর ধরে কাজ করছিলেন। তাদের কেউ কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যেতে পারে কিম্বা কারো কারো স্বাভাবিক মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে।

লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬ সালে অভিযোগ করে যে কাতারের কোম্পানিগুলো বিদেশি শ্রমিকদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, বহু শ্রমিক নোংরা জায়গায় বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে, কাজ পাওয়ার জন্য তাদেরকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়েছে, অনেকের মজুরি দেওয়া হয়নি, এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে।

শুধু বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নয়। কাতারের সার্বিক মানবাধিকার নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ তাদের ২০২৪ সালে প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলেছে, নারীদের অধিকার প্রশ্নে কাতারে বৈষম্যমূলক আইন রয়েছে।

তাছাড়া দেশটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও খুবই সীমিত। কাতারের আমির ও রাজতন্ত্রকে সমালোচনা করে কোন মতামত প্রকাশ করা যায়না বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024