সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।
দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..
দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।
দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।
দিবা রাত্রির কাব্য
মানিক বন্দোপাধ্যায়
‘তার দরকার হবে না।’
নীরবে ছ’জনে এগিয়ে চলল। সমুদ্রতীর পথ নয় কিন্তু হেঁটে বড় আরাম। পাশে অনন্ত সমুদ্রের গা ঘেঁষে সমুদ্রতীরও কোথায় কতদূর চলে গেছে, শেষ নেই। সঙ্গী নিয়ে নিঃশব্দে হাঁটবার সুবিধাও এইখানে সমুদ্রের কলরব নীরবতাকে প্রচ্ছন্ন করে রাখে, পীড়ন করতে দেয় না।
অনেক দূর গিয়ে সুপ্রিয়া জিজ্ঞাসা করল, ‘চিঠিতে ওই মেয়েটার কথা লেখেননি কেন?’
‘লিখিনি? ভুল হয়ে গিয়েছিল।’
‘আমি খবর পেয়েছিলাম। ও সাক্ষী দিতে একবার পুরী এসেছিল। গিয়ে বলল, আপনি এক তান্ত্রিকের আড্ডায় ডুবতে বসেছেন।’
‘তান্ত্রিক নয়, বৈষ্ণব।’
‘মেয়েটাকে দেখেই আমার ভাল লাগেনি। ওর মা-টা আরও খারাপ।’
হেরম্ব গম্ভীর হয়ে বলল, ‘তুই বুঝি ভুলে গেছিস, সুপ্রিয়া, কতকগুলি কথা আছে মুখ ফুটে যা বলতে নেই?’
সুপ্রিয়া কলহের সুরে বলল, ‘চুপ করে থাকব, না? আমি তা পারব না। আমি মেয়েমানুষ, অত উদার আমি হতে চাই না। পারলে ওই রাক্ষসীকে আমি বিষ খাইয়ে গলা টিপে মেরে ফেলব, এই আপনাকে আমি স্পষ্ট বলে রাখলাম।’
হেরম্ব অনাথের মতো অনুত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘তুই যে ক্রমেই মালতী- বৌদি হয়ে উঠছিস, সুপ্রিয়া!’
‘মালতী-বৌদি কে? ওই মা-টা বুঝি? হুঁ’, ডাকের দেখি বাহার
আছে!’
‘চেহারার বাহার আছে, সুপ্রিয়া।’
‘তা আছে। দু’জনারই।’
খোঁচা খেয়ে হেরম্ব একটু বিরক্ত হল। সুপ্রিয়ার এবারকার পদ্ধতিটি ভাল নয়।
Leave a Reply