শিবলী আহম্মেদ সুজন
তীব্র এই গরমে শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী লোকজন কলেরা,ডায়রিয়া ও হার্ট অ্যাটাক সহ আরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । দিন দিন হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।তীব্র এই তাপদাহে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুকি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কি কি করণীয় তার পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাহবুবুর রহমান।
তীব্র গরমে যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বা অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন যারা তাদের নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কী কী করতে হবে
১। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সময়ে রোদে যাবেন না।
২। পর্যাপ্ত তরল/পানি পান করুন।
৩। দেশীয় রসাল ফলমূল গ্রহণ করুন।
৪। একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে ছাতা ব্যবহার করুন।
৫। চিকিৎসকের দেয়া ওষুধপত্র নির্দেশ মত খেতে থাকুন।
৬। যাঁরা বাইরে কাজ করতে বাধ্য তাঁরা যথাসম্ভব গাছের ছায়ায় মুক্ত বাতাসে চলাফেরা করুন।
৭। প্রচুর ঘাম ঝরলে লবণযুক্ত লেবু পানি পান করুন। ওরাল স্যালাইনও খেতে পারেন।
৮। যেসব রোগী পানি কমাবার ওষুধ যেমন Lasix, Fusid, frulac ইত্যাদি খাচ্ছেন তাঁরা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সাময়িক বন্ধ রাখুন।
৯। কিডনী রোগীরা পরিমিত পানি গ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রক্তের Creatinine and S electrolytes পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
১০। হৃদরোগীগণ ভারী কাজ থেকে বিরত থাকুন।
ওপরের বিষয় গুলো মেনে চললে যে কেউ এই তীব্র গরমে নিজের হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
বাস্তবে হার্ট ফেইলিউর মানে ওই মুহূর্তে মারা যাওয়া নয়। হাট ফেইলিউরের অর্থ হার্টের উপরে যে অর্পিত দায়িত্ব সেটা ঠিকমত পালন করতে না পারা। হার্ট ফেইলিউর মানে এই নয় যে হার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত মানুষ মনে করে হার্ট ফেইলিউর হলে হার্ট বন্ধ হয়ে যায় বা মানুষ মারা যাচ্ছে। হার্টের প্রধান কাজ হচ্ছে রক্ত সরবরাহ করা ।রক্তের মধ্যদিয়ে হার্ট অক্সিজেন,খাদ্য,সুগার,অন্যান্য প্রোটিন পুরো শরীরে প্রতিটা কোষে পাঠায়। কোষ খাদ্য ও অক্সিজেন ব্যবহার করে শরীরে শক্তি উৎপাদন করে । সেই শক্তি দিয়ে মানুষ কথা বলে ,চলাফেরা করে ,দেখে ,চিন্তা করে জীবনযাপন করে। কোষ যখন পর্যাপ্ত পরিমানে খাদ্যও অক্সিজেন না পায় তখন শক্তি উৎপাদন করতে পারে না তখন এটাকে হার্ট ফেইলিউর বলা হয়।
হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ কি ?
হার্টের নিজস্ব যে রক্তনালী আছে সেটা ব্লক হয়ে যাওয়া । ব্লক হয়ে গেলে হার্টের নিজস্ব যে পেশী আছে তা অক্সিজেন ও রক্ত না পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল হয়ে আস্তে আস্তে হার্ট পাম্পিং টা কমিয়ে দেয়। রক্ত নালীর ব্লক জনিত হার্ট ফেইলিউর এটাই সবচেয়ে বড় কারণ।
অতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হার্টের প্রেসার কমিয়ে রাখার ফলে হার্ট ভালো থাকে।
হার্টের ভাল্ব যদি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ।হার্টের রক্ত একদিক দিয়ে ঢুকবে অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে যাবে । ভাল্বে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ওয়ানওয়ে পাম্পিং টা হবে না ।ভাল্ব চিকন হয়ে গেলে রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হবে। ভাল্বের যে সমস্যা সেটা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।
হার্ট যদি পর্যাপ্ত প্রসাধরণ ও সংকোচনে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে সেখানেও হার্ট ফেইলিউরের সম্ভাবনা থাকে।
হার্টে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি কমে যায় তাহলে হার্ট যতই পাম্প করুক না কেন অক্সিজেন উৎপাদন না হলে সেখানে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
এগুলো হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কিছু কারণ ।
Leave a Reply