শ্রী নিখিলনাথ রায়
তিনিও জগৎশেঠ ও রায়দুর্লভের নিকট হইতে সাহায্য প্রাপ্ত হইবেন বলিয়া ইংরেজ দিগকে অবগত করান। ইংরেজেরা মীরজাফরের প্রস্তাবই সঙ্গত মনে করেন; কিন্তু ইয়ার লতিবকৈও হস্তচ্যুত করেন নাই। তাহার পর পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজেরা জয়ী হইয়া, মীর- জাফরকে মসনদে বসাইলে, সিরাজ রাজমহলের নিকট হইতে ধৃত হইয়া মুর্শিদাবাদে আনীত হন।
তাহার পর মহম্মদী বেগের তরবারির আঘাতে তাঁহার দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন হইয়া ভূতলে পতিত হয়। কোন দেশীয় গ্রন্থকার বলেন যে, জগৎশেঠ ও ইংরেজ-সদ্দার সিরাজের হত্যা- কাণ্ডের জন্য মীরজাফরকে উত্তেজিত করিয়াছিলেন। ইহার সত্যা- সত্য সাহস করিয়া বলিতে পারা যায় না। যদি এ ঘটনা সত্য হয়, তাহা হইলে, জগৎশেঠ মহাতপচাঁদের নাম যে চিরকলঙ্কিত হইয়া থাকিবে, তদ্বিষয়ে অণুমাত্র সন্দেহ নাই।
যে হতভাগ্য রাজ্যহারা, সর্ব্বস্ব হারা হইয়া অবশেষে আপনার প্রাণভিক্ষার জন্য প্রত্যেকের পদতলে বিলুন্ঠিত হইয়াছিল, তাহার প্রাণদানের পরিবর্তে যদি প্রাণনাশে কেহ সম্মতিমাত্রও দিয়া থাকে, তাহা হইলে তাহার ন্যায় ঘৃণিত ও নিষ্ঠুর প্রকৃ- তির লোক যে সর্ব্বথা নিন্দনীয়, এ কথা মুক্তকণ্ঠে বলা যাইতে পারে। ক্লাইবের ন্যায় কঠোর প্রকৃতি ইংরেজ-সর্দারের এ প্রবৃত্তি শোভা পাইতে পারে, কিন্তু জগৎশেঠের ন্যায় উচ্চবংশসম্ভূত ব্যক্তির এ প্রবৃত্তি কদাচ সাধুজনপ্রশংসনীয় হইতে পারে না। ক্লাইব যে ঐরূপ ঘৃণিত কাৰ্য্য করিয়াছিলেন, তাহাতেও আমাদের ঘোরতর সন্দেহ আছে।
পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর মুর্শিদাবাদের মসনদে উপবিষ্টনি। তাঁহার সিংহাসনারোহণের পরেই সন্ধির প্রস্তাবানুযায়ী অর্থাদির নিষ্পত্তি আরম্ভ হয়। পলাশীর যুদ্ধের সাত দিবস পরে ১৭৫৭ খৃঃ অব্দের ৩০শে জুন মহিমাপুরে শেঠদিগের বাটীতে সমস্ত বিষয়ের মীমাংসার জন্য সকলে সমবেত হন এবং সেই খানে ক্লাইব আমীরচাঁদকে জাল লোহিত সন্ধি- পত্রের কথা প্রকাশ করিয়া বলেন।
Leave a Reply