শ্রী নিখিলনাথ রায়
শুনিয়া, আমীরচাদ মুচ্ছিত হইয়া পড়েন। তাহার পর তাঁহার মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ায়, ক্লাইব তাঁহাকে তীর্থযাত্রার পরামর্শ প্রদান করিয়াছিলেন। ষড়যন্ত্রে শেঠদিগের লাভা- লাভের কথা বিশেষ কিছু বুঝা যায় না।
মীরজাফরের সিংহাসনে উপবেশন করার পর ইংরেজেরা বাঙ্গলার একরূপ সর্ব্বময় কর্তা হইয়া উঠিলেন। এই সময়ে তাঁহারা আপনা- দিগের লাভালাভের বিষয়ে সবিশেষ মনোযোগী হইলেন। আপনা- দের সুবিধার জন্য তাঁহারা ১৭৫৮ খৃঃ অব্দে কলিকাতায় একটি টাক- শাল স্থাপন, করিলেন। কলিকাতা টাকশালের মুদ্রিত মুদ্রা প্রচলিত করিবার জন্য তাঁহারা যথেষ্ট চেষ্টা আরম্ভ করিয়াছিলেন; কিন্তু প্রথমে কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।
তখনও সমস্ত বঙ্গদেশে এবং বাদশাহের নিকট পর্যন্ত জগৎশেঠদিগের ক্ষমতা সমভাবেই বিরাজ করিতেছিল। কলিকাতায় টাকশাল হওয়ার মুর্শিদাবাদ টাকশালের ক্ষতি হইতে আরম্ভ হয়; কাজেই জগৎশেঠদিগেরও লাভে বিঘ্ন উপস্থিত হইয়াছিল। কিন্তু সমস্ত বঙ্গদেশে মুদ্রাপ্রচলনের ভার জগৎশেঠের হস্তে থাকায়, প্রথম প্রথম কেহ মুর্শিদাবাদের মুদ্রিত টাকার পরিবর্তে কলিকাতার মুদ্রিত টাকা গ্রহণ করিতে সাহসী হইত না।
আমরা জানিতে পারি যে, ১৭৫৮ খৃঃ অব্দে ডগ্লাস নামে কোম্পানীর একজন উত্তমর্ণ কলিকাতা টাক- শালের টাকা লইতে অস্বীকৃত হইয়া বলেন যে, কলিকাতার মুদ্রিত মুদ্রা লইলে, তাঁহাকে শতকরা ৫ হইতে ১০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি স্বীকার করিতে হইবে। কারণ মুদ্রাপ্রচলনের ভার জগৎশেঠের উপর নির্ভর করিতেছে। যিনি ইচ্ছা করিলে, নিজের সুবিধানুযায়ী সমস্তই পরিবর্তন করিতে পারেন।
Leave a Reply