বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
উদারতার রবির উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে সচেতনমূলক র‍্যালির শুভ উদ্বোধন চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে এক নম্বর হতে হবে চীন ও পশ্চিমের মধ্যে বৈরিতা শুরু যে বোমা হামলার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউরোপ সফরে শি মানুষ এবং অংশীদারিত্ব বিশ্বকে পরিবর্তন করছে -বিল গেটস ইউরোপ যেতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়াদের ১২ ভাগই বাংলাদেশি দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬১ তম কিস্তি ) দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলছে

ওয়াশিংটনের চিন্তা ভাবনায় পাকিস্তানের কোন অবস্থান নেই

  • Update Time : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.৩০ এএম

শহীদ জাভেদ বুরকি

 

বিশ্ব ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে, অনেক মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে দুটি অঞ্চলকে যাদের ভৌগলিক অবস্থান অনেক দূরে অবস্থিত। এক দিকে পশ্চিম ইউরোপ এবং অন্য দিকে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া। এই প্রবন্ধে আমি মূলত এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই যে কীভাবে পাকিস্তান, জনসংখ্যার দিক থেকে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম দেশ, বিশ্বের প্রধান ক্ষমতাকেন্দ্রগুলির দ্বারা উপেক্ষিত হচ্ছে। বিশ্বের দুই মহাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাবধানে পর্যবেক্ষণ করছে এবং গবেষণা করছে ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশকে। ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণে এটা ঘটেছে। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ফলে এশীয় মহাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে নজর দেওয়া হচ্ছে। আজকে আমি এশিয়ার ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে লিখব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এশিয়া নয়াদিল্লি থেকে শুরু হয়ে টোকিওতে শেষ হয়। তাঁর পূর্বসূরী ওয়াশিংটন প্রশাসনগুলোর ক্ষেত্রেও এই মহাদেশের সংজ্ঞা একই রকম ছিল। আফগানিস্তান, যে দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দশক ধরে জড়িত ছিল, একটা ভিন্ন ঘটনা। আফগানিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যের বর্ধিত অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সংজ্ঞাগুলো যদি সঠিক হয়, তাহলে ওয়াশিংটনের চিন্তাভাবনায় পাকিস্তানের কোনো স্থান নেই।

একাধিক কারণে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রথমত, মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ভারতীয় ডায়াস্পোরার ক্রমবর্ধমান প্রভাব। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা এখন কয়েকটি বড় মার্কিন কোম্পানির প্রধান এবং বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে আছেন। বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ উভয়েই ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ। দ্বিতীয় কারণ হলো এই বিশ্বাস যে ভারত শুধু এশিয়াতেই নয়, এশিয়ার বাইরেও চীনের বর্ধিত প্রভাবকে প্রতিহত করতে পারে। কোয়াড নামে পরিচিত ব্যবস্থা – যার নাম দিয়েছিলেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী – এতে তাঁর দেশ ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় কারণ হলো, বিশাল ও সম্ভাবনাময় ভারতীয় বাজারে কর্পোরেট আমেরিকার আগ্রহ। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইকোনমিস্ট ভারত নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল, শিরোনাম “ভারতের মুহূর্ত: মোদী কি এটা নষ্ট করবেন?” পত্রিকাটি লিখেছে, “ভারতের ক্ষেত্রে আগামী বছরগুলোতে ৭% বা ৮% হারে বৃদ্ধি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এটা বিশাল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সাহায্য করবে। বৈশ্বিক ব্যবসার জন্য এটা একটি বিশাল নতুন বাজার ও উৎপাদনের ভিত্তি তৈরি করবে এবং এশিয়ায় চীনের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করবে। ভাগ্য, উত্তরাধিকার ও বাস্তব সিদ্ধান্তগুলো আগামী দশকের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এটা ভারত ও মিঃ মোদির নষ্ট করার।” ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে পত্রিকার ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক সমর্থন এই সতর্কবাণীর সাথে এসেছিল যে “এই বসন্তের উৎসবের মৌসুমে মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অস্বাভাবিক বেশি ঘৃণ্য সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে। তবে, বিজেপি নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করার খুব কম চেষ্টা করেছে। বরং, তারা হিন্দুদের ধর্মীয় অধিকার নিয়ে চিৎকার করেছে।” সন্দেহ নেই যে মোদির অধীনে ভারত ধর্মীয় ও সভ্যতার সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা ওয়াশিংটনকে বিচলিত করেনি বলে মনে হচ্ছে। যদিও বাইডেন ভারতকে তাঁর এশিয়া সফরের অন্তর্ভুক্ত করেননি, তবে তিনি টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে দেখা করেছিলেন যখন তিনি আবার কোয়াড দেশগুলিকে একত্র করেছিলেন আলোচনার জন্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ মহাদেশটিকে কীভাবে দেখছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের অল্প পরেই ওয়াশিংটনে একটি কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০ মে ২০২২  প্রথম  সিওলে আসেন সব মিলিয়ে দুই দেশে পাঁচ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেন। স্যামসাং পরিচালিত একটি সাইটে বক্তব্য দিয়ে বাইডেন বলেন, এই কারখানা পরিদর্শনটা আমার সফরের একটি শুভ সূচনা, কারণ এটা আমাদের জাতিগুলোর ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের প্রতীকী যা আমরা একসাথে গড়ে তুলতে পারি ও তুলতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে স্যামসাং টেক্সাস অঙ্গরাঞ্জ্যের টেইলরে অনুরূপ একটি কারখানা নির্মাণে ১৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই কারখানায় ৩,০০০ লোক কর্মসংস্থান পাবে। আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কংগ্রেসকে আইন পাস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন যা সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারকদের ৫২ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ভর্তুকি এবং সরবরাহ চেইনের নমনীয়তা ও মার্কিন উৎপাদনকে সমর্থন করতে ৪৫ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ঋণ দেবে। এই আইনটি কংগ্রেসে অনুমোদিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দ্বিদলীয় বিলের মধ্যে একটি ছিল। স্যামসাং কারখানায় তাঁর বক্তব্যে বাইডেন বলেন, “বিশ্বের ভবিষ্যতের অনেক কিছু আগামী কয়েক দশকে এখানে ইন্দো-প্যাসিফিকে লেখা হবে। আমরা আজ যে সিদ্ধান্ত নেব তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে বিশ্বের ওপর।”

নতুন পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ ২৩ মে টোকিওতে প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ওবামার উদ্যোগে, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপে যুক্ত হওয়া অনেকগুলো একই দেশকে একত্রিত করা, যার থেকে পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন কিন্তু এটি ওবামা পদ্ধতির কেন্দ্রীয় বাজার সুবিধা বা শুল্ক হ্রাসের বিষয়গুলো ছাড়াই।

এই নতুন কাঠামো হচ্ছে একটি ঐতিহ্যগত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নয়। এটি বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনীদের বিশ্বাস  এশীয় জাতিসমূহেরও আগ্রহের চারটি প্রধান ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা। এগুলো হলো: বিশ্বব্যাপী শিল্প কাঠামোকে আবদ্ধকারী সরবরাহ চেইন; ডিজিটাল অর্থনীতি; পরিষ্কার জ্বালানি রূপান্তর; এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ। প্রেসিডেন্টের সাথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে যাত্রাকালে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাকে সুলিভান বলেন, এটা একটা “বড় বিষয়” হবে এবং এশিয়ায় আমেরিকার সম্পর্কের জন্য একটা “উল্লেখযোগ্য মাইলফলক”। আমার মনে হয় এটাই হবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নতুন মডেল যা ২১শ শতাব্দীর বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও সরবরাহ চেইনের শর্ত ও নিয়মাবলী নির্ধারণ করবে।

ফিনান্সিয়াল টাইমস খবর দিয়েছে, আরো বেশি দেশকে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রশাসন সংগঠনের বিবৃতির ভাষা নরম করেছে। বাইডেনের দলের মধ্যে উদারপন্থী বিরোধীতার কারণে কিছু দেশ উদ্বিগ্ন যে ওয়াশিংটন তাদের ওপর শ্রম ও পরিবেশগত মান চাপাবে ভালো বাণিজ্যিক শর্তের লেনদেনের বিনিময়ে। জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাম এম্যানুয়েল ব্যাখ্যা করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় তাদের বলার স্বার্থ আছে বলে তারা এখানে আছে এ  আমেরিকা বলতে পারে্ এবং চীনেরও  বলার স্বার্থ আছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।” তবে, এসব কোনো ব্যবস্থায় পাকিস্তানের কোনো স্থান নেই।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে ২২ এপ্রিল ২০২৪ এ প্রকাশিত।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024