সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫২ তম কিস্তি )

  • Update Time : সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

ছোট বাড়িতে আমি থাকতে পারব না। সাত-আটখানা ঘর আর খুব বড় খোলা ছাদ থাকা চাই।’

সুপ্রিয়ার এই অন্তিম আবেদন।

ভীরু হেরম্ব পকেট হাতড়ে চুরুট বার করে। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে চুরুট ধরিয়ে বলল, ‘টিকিটের টাকা আনতে একবার কিন্তু আশ্রমে যেতে হবে, সুপ্রিয়া।’

সমস্ত রাত্রি সমুদ্রের ধারে কাটিয়ে পরদিন সকালে তাদের কলকাতা চলে যাবার মতো বৃহৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে টিকিটের টাকার জন্য চিন্তিত হওয়া এত বেশী তুচ্ছ যে হেরম্ব ভাবতেও পারল না, সুপ্রিয়া বুঝবে না এ শুধু আর সময়োচিত গম্ভীর পরিহাস, সুপ্রিয়ার প্রস্তাবকে এমনিভাবে দুর্বল হেরম্বের হেসে উড়িয়ে দেওয়া। সুপ্রিয়া কিন্তু সত্য সত্যই তার এই কথাকে স্বীকারোক্তি বলে ধরে নিল।

‘তার দরকার নেই, আমার গায়ে গহনা আছে।’

একটু চিন্তা করে হেরম্ব বক্তব্য স্থির করে নিল।

‘শোন, সুপ্রিয়া। তোর বিয়ের সময় তোকে একটা উপহারও কিনে দিইনি। আর আজ তোর গয়না বিক্রির টাকায় কলকাতা যাব? এমন কথা তুই ভাবতে পারলি! একবার তোর ভয় হল না, লজ্জায় ঘৃণায় আমি তা’হলে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করব?’

সুপ্রিয়ার হাত এতক্ষণে হয়তো অবশ হয়ে এসেছিল, হাত মুচড়ে তার শরীরের আশ্রয়চ্যুত ঊর্ধ্ব ভাগ হেরম্বের কোলে হুমড়ি দিয়ে পড়লে অস্বাভাবিক হত না। কিন্তু সে সোজা হয়েই বসল। স্তব্ধ নিশ্চল, কাঠের মূর্তির মতো। রূপাইকুড়ায় হেরম্বের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শুকনো ঘাসে-ঢাকা মাঠে সে এমনিভাবে বসেছিল। হেরম্বের মনে আছে। তখন সূর্য অস্ত গিয়ে সন্ধ্যা হয়েছিল।

আজ সূর্যাস্তের সূচনা মাত্র হয়েছে। ছোট একটি মেঘ এত জোরে ছুটে আসছে যে, সূর্যাস্তের আগেই সূর্যকে ঢেকে ফেলবে। সুপ্রিয়ার মুখ থেকে আকাশে দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে হেরম্বের মুখও বিবর্ণ স্নান হয়ে গেল। দু’হাতে ভর দিয়ে সে বসেছে। দুই করতলে সুক্ষ্ম শীতল বালির স্পর্শ অনুভব করে তার মনে হল, যে পৃথিবীর সবুজ তৃণাচ্ছাদিত হওয়ার কথা,তার আগাগোড়া হয়ে গেছে মরুভূমি।

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫১ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫১ তম কিস্তি )

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024