শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৫ তম কিস্তি )

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

প্রথম দিন পূর্ণিমা রাত্রে নাচ শেষ না করে আনন্দ যে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছিল এখন তার নতমুখে তেমনি একটা যন্ত্রণার আভাস দেখে হেরম্ব ভয় পেল।

‘এসব কি বলছ, আনন্দ?’

‘মুখ দেখে বুঝাতে পারছ না এখনো আমার মন নোংরা হয়ে আছে? একটা ভাল কথা ভাবতে পারছি না। আমার মনে এক ফোঁটা শান্তি নেই।’ হেরম্ব নির্বোধের মতো কথা খুঁজে খুঁজে বলল, ‘ঈর্ষায় তো এরকম হয় না, আনন্দ।’

আনন্দ বিরস কণ্ঠে বলল, ‘কে বলেছে ঈর্ষা-শুধু ঈর্ষা হলে তো বাঁচতাম, আমি সবদিক দিয়ে খারাপ হয়ে গেছি। একটু আগে কি ভাবছিলাম জান? ‘কি ভাবছিলে?’

‘দেখো, বলতে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।’

‘ফাটবে না, বল।’

আনন্দ আঙুল দিয়ে মেঝেতে দাগ কাটতে কাটতে বলল, ‘বলা আমার উচিত নয়। অন্য মেয়ে হয়তো বলত না। তুমি তো জান আমি অন্য মেয়ের সঙ্গে বেশী মিশিনি। বলা অন্যায় হলে রাগ ক’রো না, আমায় ক্ষমা ক’রো। দেখো, আমি এত ছোট হয়ে গেছি, একটু আগে তোমাকে খারাপ লোক মনে করেছিলাম।’

আনন্দ যে তার ঠিক কি ধরনের মানসিক অপরাধের কথা স্বীকার করছে হেরম্ব বুঝতে পারল না। তার মনে আনন্দের কথায় সুপ্রিয়া সংক্রান্ত কোন ইঙ্গিত আছে। আনন্দ না বুঝুক তার ঈর্ষারই হয়তো একটা শোচনীয় রূপ। তবু কথাটা স্পষ্টভাবে না বুঝে সে কিছু বলতে সাহস পেল না। একটু উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, ‘কেন তা ভাবলে?’

‘তা জানি না। আমার মনে হল আমাকে দেখে তোমার লোভ হয়েছিল তাই আমাকে ভুলিয়েছ, আমার ছেলেমানুষির সুযোগ নিয়ে।’

হেরম্ব আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘তোমায় দেখে কার লোভ হবে না, আনন্দ? আমারও হয়েছিল। সেজন্য আমি খারাপ লোক হব কেন?’

‘লোভ হয়েছিল বলে নয়, শুধু লোভ হয়েছিল বলে। তোমার শুধু লোভই হয়েছিল, আর কিছু হয়নি?’ আমায় দেখে

‘অর্থাৎ আমার ভালবাসা-টাসা সব মিছে?’

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৪ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৪ তম কিস্তি )

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024