ইব্রাহিম নোমান
চারপাশে মশা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আগে বর্ষায় মশার উপদ্রব বাড়লেও এখন সবসময় মশার সঙ্গেই আমাদের থাকতে হয়! সামনেই আসছে মশার মৌসুম। ক্যাটনিপের মাধ্যমে মশা তাড়ানোর খবর পুরোনা হলেও বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা আশার আলো দেখাচ্ছে! নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে করা একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন পোকা তাড়ানোর এক বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে ক্যাটনিপের।
ক্যাটনিপ কী
ক্যাটনিপ হচ্ছে একধরনের বুনো জাতীয় আগাছা। এই গাছে এক প্রকারের প্রাকৃতিক উদ্ভিজ কেমিক্যাল রয়েছে, যা বিড়ালের পছন্দ। এছাড়া মশা, মাছি, পোকামাকড়কে দূর করে। এই গাছ পোকামাকড় তাড়ানোর উপাদানের চাইতেও বেশি কার্যকর। আলো-বাতাস আসে এমন স্থানে খুব সহজেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। অনেক বিড়াল এর গন্ধ শুঁকতে খুবই পছন্দ করে। বিড়ালের শরীরের জন্য ভালো এবং হজমে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে পানিতে সেদ্ধ করে পানীয় হিসেবে বিড়ালকে দেওয়া যায়। এর গন্ধ পেলে তারা উত্তেজিত হয়ে যায়। খেলতে শুরু করে। মাটিতে গড়াগড়ি খায়। গা ঘষতে থাকে। বিড়াল সবুজ ও তাজা ক্যাটনিপ বেশি পছন্দ করে ।
ক্যাটনিপ কোন ধরনের ভেষজ
অনেকটা পুদিনা পাতা গোত্রীয় ভেষজ ক্যাটনিপ। ইউরোপ, অ্যামেরিকা এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় এদের। প্রাচীনকাল থেকেই পোকা তাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ভেষজ। কিন্তু কেন পোকা মাকড় ক্যাটনিপ এত অপছন্দ করে তা এত দিন ঠিক করে বলতে পারতেন না কেউ। তবে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন ঠিক কী কারণে ক্যাটনিপ সহ্য করতে পারে না মশার মত প্রাণীরা ।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, ক্যাটনিপে রয়েছে নেপেটালেকটোন নামে এক ধরনের অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট যা মশাদের ইরিট্যান্ট রিসেপ্টরকে (এক ধরনের স্নায়ু যা শ্বাসের সাথে ভেতরে গেলে সাময়িক অস্বস্তির সৃষ্টি করে) জাগ্রত করে। এটি টিআরপিএ ১ নামক একটি ব্যথা রিসেপ্টরকে ব্যথার সংকেত পাঠায়। অর্থাৎ ক্যাটনিপের সংস্পর্শে এলে মশা এবং অন্য পোকারা আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস কলেজের মার্কো গ্যালিও বলেন, ‘আমরা শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করে। এই বিষয়ে ওয়েইনবার্গ। ধারনা করছি, পোকদের অনেকগুলো ইরিট্যান্ট রিসেপ্টর জাগ্রত করে ক্যাটনিপ। যার ফলে ক্যাটনিপ বর্জন করে পোকারা।
ক্যাটনিপ ব্যবহারের সুবিধা
মজার ব্যাপার হল ক্যাটনিপ মানুষদের এই সব রিসেপ্টরকে জাগ্রত করে না কেবল মশা এবং পোকামাকড়দের উপরই কাজ করে। অন্যদিকে রশুন এবং ওয়াসাবি পোকামাকড়দের সাথে সাথে মানুষের ইরিট্যান্ট রিসিপ্টিরগুলোও জাগ্রত করে। এসব দিক বিবেচনা করে দেখা যায়, পোকা তাড়ানোর ঔষধ হিসেবে ক্যাটনিক ব্যবহারের কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে পোকামাকড় এবং আরও কিছু প্রাণীদের শরীরে ট্রান্সিয়েন্ট রিসেপ্টর পটেনশিয়াল অ্যাঙ্করিন (টিআরপিএ ১) নামক এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রাণীদের ব্যথা এবং চুলকানি বোধ করায়। ক্যাটনিপের সংস্পর্শে এলে এই প্রোটিন কাজ করতে শুরু করে। এই শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে মশা এবং অন্যান্য প্রাণীরা ক্যাটনিপ পরিহার করে ।
মশা তাড়ানোর সম্ভাবনা কতটুকু গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে একটি পরীক্ষাও করেছেন। গবেষকরা। একটি পাত্র ক্যাটনিপ ভেজা কাপড় দিয়ে ঘিরে তার ভেতর একজন স্বেচ্ছাসেবীর হাত প্রবেশ করান । একই সাথে অন্য আরেকটি স্বাভাবিক পাত্রে (ক্যাটনিপ ছাড়া পাত্র) স্বেচ্ছাসেবীদের হাত রাখতে বলা হয়। বায়ু চলাচল করতে পারে এমন টিউবের মাধ্যমে মশাদের জন্যে স্বেচ্ছাসেবীদের হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর একটি রাস্তা তৈরি করেন গবেষকরা। দেখা যায়, ক্যাটনিপ যুক্ত পাত্রটি এড়িয়ে চলছে মশারা। অন্যদিকে স্বাভাবিক পাত্রে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছে এরা। গবেষকরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে গেছে মশার পরিমাণ। মশা তাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে কীটনাশক, যা মেরে ফেলছে পরিবেশের জন্যে দরকারি অনেক পোকা। তাই মশা তাড়াতে ক্যাটনিপ ব্যবহার করা হলে তা পরিবেশের জন্য যেমন অনেক উপকারী হবে তেমনি একই সাথে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য হবে সাশ্রয়ী ।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, সারাক্ষণ
Leave a Reply