শ্রী নিখিলনাথ রায়
১৭৬০ খৃঃ অব্দে মীরজাফর সিংহাসনচ্যুত হইলে, তাঁহার জামাতা কাসেম আলি খাঁ (মীর কাসেম) বাঙ্গলার মসনদে উপবিষ্ট হন। সিংহাসন-প্রাপ্তির পূর্ব্বে কাসেম আলি ইংরেজদিগের নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছিলেন যে, তাঁহাদের ও জগৎশেঠের পরামর্শানুসারে শাসনকার্য্য নির্ব্বাহ করিবেন। বাণিজ্যের শুল্কঘটিতব্যাপার লইয়া ক্রমশঃ ইংরেজ- দিগের সহিত মীর কাসেমের ঘোরতর বিবাদ উপস্থিত হয়। জগৎশেঠ বরাবরই ইংরেজদিগের পক্ষ ছিলেন। এক্ষেত্রেও যে তাঁহাদের পক্ষ অব- লম্বন না করিয়াছিলেন, এমন নহে। মীরকাসেম অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও বুদ্ধিমান্ ছিলেন। তিনি মীর জাফরের ন্যায় ভীরু-প্রকৃতি অথবা সিরাজ উদ্দৌলার ন্যায় অতাধিক চঞ্চলমতি ছিলেন না।
ইংরেজদের সহিত বিবাদ উপস্থিত হইলে, তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, জগৎশেঠ ইংরেজ- দিগের পূর্ণ সহায়তা করিতেছেন। এই সময়ে জগৎশেঠ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ইংরেজ দিগকে ও জাফর আলি খাঁকে যে সমস্ত পত্রাদি লেখেন, তাহার কতকগুলি পত্র মীর কাসেমের হস্তগত হয়। এজন্য নবাব জগৎশেঠ মহাতপচাঁদকে বন্দী করিয়া মুঙ্গেরে পাঠাইবার জন্য বীরভূমের ফৌজদার মহম্মদ তকী খাঁর প্রতি আদেশ পাঠান। তকী খাঁ তাঁহা- দিগকে কোনরূপ অবমানিত না করিয়া হিরাঝীলের প্রাসাদে বন্দী করিয়া রাখেন।
পরে নবাবের সেনাপতি আর্মেনীয় মার্কার নবাবের আদেশে সসৈন্যে তাঁহাদিগকে লইতে উপস্থিত হইলে, তকী খাঁ তাঁহা- দিগকে মার্কারের হস্তে সমর্পণ করেন। এই সময়ে নবাব কাসেম আলি খাঁ মুঙ্গেরে অবস্থিতি করিতেন। মার্কার তাঁহাদিগকে লইয়া মুঙ্গেরে ‘উপস্থিত হন। নবাব শেঠদিগের প্রতি অত্যন্ত সদ্ব্যবহার করিয়া মুঙ্গেরে একটি কুঠী সংস্থাপন করিবার জন্ত তাঁহাদিগকে নির্ব্বন্ধসহকারে অনুরোধ করেন। অতঃপর তিনি তাঁহাদিগকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করিতে অনুমতি দিয়াছিলেন; কিন্তু পাছে ইংরেজদিগের সহিত পুনর্ব্বার শেঠদিগের মন্ত্রণা আরম্ভ হয়, তজ্জন্য যাহাতে তাঁহারা অধিক দূর ভ্রমণ করিতে না পারেন, সে বিষয়ে স্বীয় অনুচরদিগকে সতর্ক করিয়া দেন।
তৎকালে তান্সিটার্ট সাহেব কলিকাতার গবর্ণর ছিলেন। তিনি বরাবরই মীরকাসেমকে শ্রদ্ধা করিতেন। ইংরেজদিগের সহিত বিবাদে ভান্সিটার্ট প্রথম প্রথম মীরকাসেমের পক্ষ সমর্থন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন; কিন্তু ক্রমে যখন বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠে, তখন তিনি নবাবকে নিরস্ত হইতে অনুরোধ করেন।
Leave a Reply